পদ্মা সেতু চালুর পর এই ঘাটে ৭৫ শতাংশ যানবাহন কমেছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।
Published : 25 Jun 2023, 07:54 PM
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার ছিল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ। ২০ মিনিটে পদ্মা নদী পারি দিতে এ ঘাটের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হত। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সুফলে কমেছে ভোগান্তি, স্বস্তি ফিরেছে ঘাট দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের।
আর এই পদ্মা সেতুকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ।
রোববার দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট ঘুরে দেখা যায়, পুরো এলাকায় শুনশান নিরবতা। নেই যাত্রী ও হকারদের হাঁকডাক। যানবাহন দীর্ঘ সারিতে বসে নেই।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে উঠে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে।
এই নৌপথ ব্যবহারকারী যাত্রী ও চালকরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর আগে এ পথে যাতায়াত করতে দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হত। যানজটের কারণে যানবাহনগুলোকে আটকে থাকতে হত ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
আর পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকে থাকত তিন থেকে চার দিন।এখন ভোগান্তি ছাড়াইদ্রুত গন্তব্যে যেতে পারছেন বলে জানান তারা।
যশোর থেকে আসা ট্রাকচালক মফিজুর রহমান বলেন, “এখন এই নৌপথ দিয়ে কতটা স্বস্তিতে পার হওয়া যায়, সেটা বোঝানো যাবে না। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এসে ১০ মিনিটের মধ্যে ফেরিতে উঠতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর আগে তিন থেকে চার দিনও ফেরির জন্য বসে থেকেছি। সে সময় গোসল, ঘুম, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ থাকত। কী যে সময় পার করেছি সেটা মনে পড়লেই গায়ের লোম শিউরে ওঠে।”
ঝিনাইদহ থেকে গরু বোঝাই করে এসেছেন ট্রাক চালক আক্কাস আলী। তিনি যাবেন ঢাকায়।
পদ্মা সেতু চালুর আগে ফেরিঘাটের অবস্থা কেমন ছিল জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, “তখন তো ভয়াবহ অবস্থা ছিল। কী যে ভোগান্তি ছিল, সেটা বলার মত না। গরু ব্যবসায়ীরা ঘাটে এসে আল্লাহ আল্লাহ করত কখন ফেরিতে উঠতে পারব। তত সময় তাদের গরুগুলো সুস্থ থাকবে তো!”
তিনি বলেন, “রোদ গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাট এলাকায় অপেক্ষায় থেকে কত গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সেই দিন আর এখন নেই। দিন পাল্টে গেছে। এখন ফেরিঘাটে কোনো ভোগান্তি নেই। আসার সঙ্গে সঙ্গে ফেরিতে উঠে চলে যাওয়া যায়। ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে পদ্মা সেতু।”
রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা রাবেয়া পরিবহনের যাত্রী মোসলেম উদ্দিন বলেন, ব্যবসার কাজের জন্য মাঝে মধ্যেই ঢাকাতে যেতে হয় তার। পদ্মা সেতু চালুর আগে দিনের অর্ধেক সময় কেটে যেত ফেরি ঘাটে। সকাল ৭টায় ঘাটে এলে ফেরিতে উঠতে হতো বিকাল ৩টা-৪টায়। ঢাকাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যেত। কাজ শেষে পরের দিন আসতে হত একইভাবে।
“এখন অবশ্য এই ঝামেলা নেই। সকালে রওনা দিলে কাজ শেষ করে রাতেই ফিরে আসা যায়। ফেরিঘাটের ভোগান্তি দূর হয়েছে পদ্মা সেতুর কল্যাণেই।”
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ্ মো. খালেদ নেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে যাত্রীবাহী পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাকের লম্বা সিরিয়াল লেগেই থাকত। আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সেবাটা দিতে পারতাম না।”
তিনি বলেন, সেতু চালুর আগে এই নৌপথে প্রতিদিন ছোট বড় মিলে সাত থেকে আট হাজার যানবাহন পারাপার হত। সেতু চালুর পর সেখানে এখন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে; যানবাহন কমেছে ৭৫ শতাংশ।
উপ-মহাব্যবস্থাপক খালেদ নেওয়াজ আরও বলেন, “পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। সেতু চালুর পর থেকে কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়া পারাপার হতে পারছে যাত্রী ও যানবাহন।
বর্তমানে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, ফরিদপুরের কিছু গাড়ি এই নৌপথ ব্যবহার করছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির এই কর্মকর্তা।