বড়াইগ্রামে পানের রাজ্যে একদিন

পোকামাকড় ও রোগবালাই থেকে পান গাছকে বাঁচাতে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হয়।

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2022, 11:54 AM
Updated : 3 Oct 2022, 11:54 AM

বাঁশের মাচায় তৈরি বরজে পানের সবুজ রাজ্যে সকালের স্নিগ্ধতায় চোখ আটকে যায়। এইমাত্র বৃষ্টিস্নানে পান-পাতায় জমে থাকা পানির ফোটায় মাচার ফাঁক গলে আসা সোনালী রোদের হাসি। সারি সারি ঝুলে থাকা পাতায় ভরে উঠেছে বরজ, যেন সবুজের মেলা।

একটু এগোতেই টুস টুস শব্দ। বসে বসে পান ছিঁড়ছেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাগডুম গ্রামের মিনাজুল ইসলাম। ছিঁড়তে ছিঁড়তে সারির শেষ প্রান্ত থেকে থোক থোক পান এনে গোল করে বস্তায় সাজিয়ে রাখছিলেন।

কাজের ফাঁকে কথা বলছিলেন। ছোট, বড়, মাঝারি ভাগে এসব পান বিক্রি করবেন পাইকারি দরে। ‘চাপিল’, ‘মাঝরা’, ‘বলি’ অথবা ‘হাই বলি’ প্রকারভেদে এসব পান স্থানীয় বাজারে প্রতি বিড়া (৬৪টি পানে এক বিড়া) ১৫ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা বলে জানালেন তিনি।

মিনাজুলের পানের বরজের পর রয়েছে আরও বরজ। শুধু পান আর পান – যেন পানের সাম্রাজ্য।

আরেকটি বরজে ঢুকতেই চোখে পড়ল মনোযোগী এক তরুণের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের দিকে।

আকর্ষণীয় পান পেতে হলে কী কী করতে হয় জানতে চাইলে ওই বরজের মালিক তাইজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন পান গাছের পরিচর্যা করতে হয়। বিভিন্ন পোকামাকড় ও রোগবালাই থেকে পান গাছকে বাঁচাতে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হয়; আর গাছের পুষ্টিতে মাটিকে আরও উর্বর করতে নানা রকমের সার দিতে হয়।

সেখান থেকে বের হয়ে দেখা হয় ওই গ্রামের মাঝবয়সী বিকাশ দার সঙ্গে। এক বিঘা জমিতে খরচ বাদে বার্ষিক কেমন টাকা আয় হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “খরচ বাড়ায় জমি তৈরি, চারা লাগানো, লিজের টাকা, শ্রমিকের মজুরি এবং আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থাপনাতে। এতে লাখ দুয়েকের মত নেমে যায়। ফলন ভালো হলে বছর শেষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো টেকে।“

তিনি পান খান না, তবে নাটোর অঞ্চলের পান খুবই সুস্বাদু বলে জানালেন।

পান তোলা শেষ হলে বিভিন্ন আকারের পান কলাপাতায় গাঁট বেঁধে জোনাইল, রাজ্জাক মোড়, বনপাড়া ও দত্তপাড়াসহ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা।

বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, বাগাতিপাড়া, নাটোর সদরসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের পান ঢাকা, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহসহ প্রায় সারাদেশের পানপ্রিয় মানুষদের কাছে পৌছে যায় পাইকারী ও খুচরা বিক্রতাদের হাত ধরে, জানান কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম।

আদর্শ পান আড়ত, একতা, করাল, সততাসহ দশটি পানের আড়ত আছে বড়াইগ্রামের রাজ্জাক মোড়ে। এসব আড়তে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা বিকিকিনি হয়। ঢাকা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ আড়তে পান কিনতে আসেন পাইকাররা। এই আড়ত ঘিরে প্রায় দুইশ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে বলে জানালেন শাপলা পান আড়তের হিসাব রক্ষক সবুজ খান।