বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাফজয়ী স্বপ্নাকে বরণ করল রংপুর

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান থেকে নামার পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বপ্নাকে লাল গালিচায় ফুলের পাপড়ি ছিঁটিয়ে ভালোবাসায় সিক্ত করা হয়।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2022, 01:16 PM
Updated : 29 Sept 2022, 01:16 PM

আর দশদিনের মতোই বৃহস্পতিবারও নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা করছে। কিন্তু সকাল থেকেই উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে যেন কারো অপেক্ষায় ছিল বিমানবন্দরটি।

অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটল বেলা পৌনে ১১টায়, যখন বিমান থেকে  সৈয়দপুরের মাটিতে পা রাখেন সাফ চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জয় করে আনা নারী ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য সিরাত জাহান স্বপ্না।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বিজয় পতাকা ওড়ানো স্বপ্নাকে বরণ করে নিতে বিমানবন্দরের বাইরে প্রস্তুত ছিল ছাদখোলা মাইক্রোবাস আর তার নিজ জেলা রংপুরের প্রতিনিধিরা। 

বিমানবন্দরের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে তারা লাল গালিচায় ফুলের পাপড়ি ছিঁটিয়ে ভালোবাসায় সিক্ত করেন স্বপ্নাকে। ফুলের মালায় তাকে বরণ করে নেন রংপুর সদর উপজেলার পক্ষে চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি।

তারপর ছাদখোলা মাইক্রোবাসে স্বপ্নাকে নিয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় গাড়িবহর। 

রংপুর পৌঁছানোর পর দুপুর ১২টায় নগরীর ঐতিহাসিক পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে স্বপ্নাকে বরণ করে নেওয়া হয় বর্ণাঢ্য সংবর্ধনায়।

জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, ডিআইজি আবদুল আলীম মাহমুদ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নূরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মঞ্জুর আহমেদ আজাদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি, ইউএনও নূর নাহার বেগমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। 

পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সংবর্ধনা শেষে সিরাত জাহান স্বপ্না রওয়ানা হন তার জন্মভিটা রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্কনির পালিচড়ার জয়রাম গ্রামে। পথে পথে তাকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা। নিজ গ্রামেও স্বপ্নাকে লালগালিচায় বরণ করে নেয় গ্রামবাসী।

এদিকে বিকালে নয়াপুকুরে নারী ফুটবলারদের জন্য নির্মিত শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে স্বপ্নার সম্মানে অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি ম্যাচ। ম্যাচে অংশ নেন সদ্যপুস্কনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের খেলোয়াড়রা।

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী সিরাত জাহান স্বপ্নারা তিন বোন। তার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। স্বপ্নার বাবা মোকছার আলী ছিলেন বর্গাচাষি। আর মা লিপি বেগম অভাব অনটনের সংসারে সন্তানদের মুখে একবেলা ভাত তুলে দিতে করেছেন ধান ভাঙার কাজ। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। সেই কষ্টের সংসারে আজ স্বপ্না যেন ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো হয়ে এসেছেন।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে সিরাত জাহান স্বপ্নার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর ২০১৩ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পান তিনি। সেই থেকে জাতীয় দলে খেলছেন এই কৃতি ফুটবলার।

এবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে চার গোল করে দেশের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন স্বপ্না। এই চার গোলের মধ্যে দুটি ছিল ভারতের বিপক্ষে।