সিলেট সিটিতে কর ধার্যে ‘অনিয়ম’, ব্যবস্থা না নিয়ে নতুন পদায়ন

গত ১০ মে এক পত্রে চন্দন দাশকে বাজার তত্ত্বাবধায়ক; শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামনকে বস্তি উন্নয়ন শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে পদায়ন করা হয়।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 03:30 PM
Updated : 1 June 2023, 03:30 PM

সিলেট সিটি করপোরেশনের কর ধার্য শাখায় বিপুল অংকের টাকার অনিয়মে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো নতুন পদায়ন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে তাদের চাকরিচ্যুতিসহ বিভাগীয় মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছিল।

এই তিন কর্মচারী হলেন চন্দন দাশ, শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামন।

গত ১০ মে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুল হক স্বাক্ষরিত এক পত্রে চন্দন দাশকে করপোরেশনের বাজার তত্ত্বাবধায়ক এবং শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামনকে বস্তি উন্নয়ন শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে পদায়ন করা হয়।

এ বিষয়ে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কর শাখার ওই তিনজনকে অন্য শাখায় পদায়ন করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি ভুল রিপোর্ট দিয়েছে কিনা, তদন্ত কমিটির সুপারিশ আমলে না নেওয়া এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে নতুন করে পদায়ন করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে সরাসরি আসতে হবে; আসলে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা যাবে। মোবাইলে বুঝিয়ে বলা যাবে না।” এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।’

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং তদন্ত কমিটির আহবায়ক মো. মতিউর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বস্তুনিষ্ঠ এবং সুনির্দিষ্টভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি কর্তৃপক্ষের কাছে। ব্যবস্থা নেওয়া না নেওয়ার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের।”

Also Read: কর নির্ধারণে ‘দুর্নীতি’, ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি সিলেট সিটির

ঘটনার শুরু গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। বাসাবাড়ির কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রায় দুই হাজার হোল্ডিংয়ের তথ্যে ‘জালিয়াতি’ ও ‘নিবন্ধন’ না করে’ ২০০৯-১০ থেকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে এসব অনিয়ম করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এতে করপোরেশন বড় অঙ্কের রাজস্ব হারায়।

সিটি করপোরেশনের নথি থেকে জানা যায়, সিলেট নগরীর আম্বরখানার ব্যবসায়ী সাফওয়ান চৌধুরীর মালিকানাধীন আর্কাডিয়া ভবনের কর নির্ধারণে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এসেসরদের বিরুদ্ধে। এরপর চন্দন দাশ, শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে মেয়রের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১১০টি হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট রেজিস্টারে তোলা হয়নি। ফলে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া ২০০৯-১০ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৮৩১টি হোল্ডিং কম্পিউটারে এন্ট্রি করা হয়নি। এতে করপোরেশনের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ আরও প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার মতো। সব মিলিয়ে এক হাজার ৯৪১টি হোল্ডিং থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় করপোরেশন।

এসব অনিয়মের কারণে কর ধার্য শাখার ‘প্রধান এসেসর’ চন্দন দাশ, এবং দুই ‘সহকারী এসেসর’ শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান; সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি পাওনা আইন ২০১৩ অনুসারে সিটি করপোরেশনের আর্থিক ক্ষতি পূরণের জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চন্দন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা ছিল না। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে করা হয়েছিল।”

এ বিষয়ে জানতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।