কর নির্ধারণে ‘দুর্নীতি’, ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি সিলেট সিটির

তদন্ত কমিটি তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করলেও ২৫ দিনেও তা হয়নি।

বাপ্পা মৈত্রসিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2023, 05:53 PM
Updated : 4 Feb 2023, 05:53 PM

কর ধার্য শাখার ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ কারণে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রায় ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে; অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ায় তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশও করা হয়েছে।

তবে তদন্ত কমিটির মামলার সুপারিশের ২৫ দিনেও এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি চলমান রয়েছে; নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বাসাবাড়ির কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রায় দুই হাজার হোল্ডিংয়ের তথ্যে ‘জালিয়াতি’ ও ‘নিবন্ধন না করে’ ২০০৯-১০ থেকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে এসব অনিয়ম করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এতে করপোরেশন বড় অঙ্কের রাজস্ব হারায়।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১১০টি হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট রেজিস্ট্রারে তোলা হয়নি। ফলে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এছাড়া ২০০৯-১০ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৮৩১টি হোল্ডিং কম্পিউটারে এন্ট্রি করা হয়নি। এতে করপোরেশনের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ আরও প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার মত।

সব মিলিয়ে এক হাজার ৯৪১ হোল্ডিং থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় করপোরেশন।  

এজন্য কর ধার্য শাখার চিফ এসেসর চন্দন দাশ, সহকারী এসেসর শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

তবে এসব বিষয়ে কর ধার্য শাখার সাবেক প্রধান ও বর্তমানে মেয়র দপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) চন্দন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই; এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়য়ন্ত্র করা হয়েছে।”

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ী সাফওয়ান চৌধুরীর মালিকানাধীন আর্কাডিয়া ভবনের কর নির্ধারণে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভবনটির অ্যাসেসমেন্ট করে ভবনটিতে ১৬টি হোল্ডিংয়ে কর নির্ধারণ করে সিটি করপোরেশনের কর ধার্য শাখা।

“কিন্তু অ্যাসেসমেন্ট রেজিস্ট্রারে মাত্র ছয়টি হোল্ডিং উল্লেখ করে কর আদায় শাখাকে চিঠি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ধার্য করকে এক বছর পর থেকে কার্যকর করা হয়। তবে ওই ছয়টি হোল্ডিং নিয়ে করা হয় জালিয়াতি, ভবনটির প্রথম ছয় তলায় মোট পাঁচটি হোল্ডিং ধরে তাতে প্রতি কোয়ার্টার প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এতে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, আর্কাডিয়া ভবনের ধার্যকৃত কর পরিশোধ কষ্টসাধ্য হবে। তাই করের হার কমানোর জন্য মেয়রের কাছে আবেদন করা হয়। সেই অনুযায়ী ধার্যকৃত সাড়ে সাত হাজার টাকা কোয়ার্টার থেকে তিন হাজার টাকা কর পুনর্র্নিধারণ করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু মেয়রের অনুমোদনের পর নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিটি হোল্ডিংয়ের ধার্য করা টাকার পরিমাণ ওভার রাইটিং করে পরিবর্তন করে কর আদায় শাখাকে চিঠি প্রদান করেন কর ধার্য শাখার কর্মকর্তারা।   

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর ধার্য শাখার অনিয়মের অভিযোগে শাখা প্রধানসহ তিন কর্মকর্তাকে মেয়র দপ্তরে যুক্ত করা হয়। অনিয়ম তদন্তে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে প্রশাসন।

পরে কমিটির দুই সদস্যকে অব্যাহতি দিয়ে চার সদস্যের কমিটিকে দেওয়া হয় তদন্তের দায়িত্ব।

সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কমিটি চার মাস সময় নিয়ে সিটি করপোরেশনের দুই শাখার বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা ও মেয়রসহ ১৩ জনের বক্তব্য নিয়ে গত ১০ জানুয়ারি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।