ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চের জানালা, পেছনের দরজা দিয়ে ওঠা-নামার সময়ে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় পড়তে হয় শিশু, নারী, শিক্ষার্থী ও বয়স্ক যাত্রীদের।
Published : 18 Aug 2023, 04:59 PM
নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার কালিকাপুরে বিআইডব্লিউটিএ’র লঞ্চঘাটে পন্টুন না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। আলাদা নৌকায় করে মাঝ নদীতে গিয়ে লঞ্চে উঠানামায় দুর্ঘটনার ঝুঁকির পাশাপাশি প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে হাজারো যাত্রীকে।
রায়পুরা উপজেলার মেঘনা নদীর চরাঞ্চলের চানপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর, বগডহরিয়া কান্দি, আলীপুরসহ ওই এলাকার মানুষের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ।
সরাসরি সড়কপথের যোগাযোগ না থাকায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের মধ্যে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে কালিকাপুরে বিআইডব্লিউটিএ’র লঞ্চঘাট থেকে যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীর। লঞ্চগুলো দিনে ১০-১১ বার করে এই পথে চলাচল করে।
কালিকাপুরের এই ঘাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, পন্টুন না থাকায় প্রখর রোদে পাড়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। লঞ্চ এলে যাত্রীদের আলাদা নৌকা করে লঞ্চে উঠতে হচ্ছে।
স্থানীয় মালেক মিয়া নামে এক মাঝি যাত্রীপ্রতি পাঁচ টাকা ভাড়া নিয়ে নৌকা দিয়ে লঞ্চে উঠিয়ে দেয়। আবার যাত্রীরা ফেরার সময় একইভাবে পাঁচ টাকা ভাড়া নিয়ে নামিয়ে দেয়। এতে করে প্রতি যাত্রীর বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা।
এছাড়া ঘাট থেকে নৌকায় উঠে আবার নৌকা থেকে লঞ্চে উঠতে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা- বিশেষ করে শিশু, নারী, শিক্ষার্থী ও বয়স্করা। ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠতে হয়। লঞ্চের জানালা, পেছনের দরজা দিয়ে ওঠা এবং নামার সময়ে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় পড়তে হয় তাদের।
লঞ্চঘাটের যাত্রীরা জানান, একসময় পন্টুন ছিল, তখন লঞ্চে ওঠানামা করতে দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পন্টুন না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষাকালে ও ঝড়বৃষ্টিতে তাদের ভোগান্তিও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানায়, এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা নবীনগর, আশুগঞ্জ, ভৈরব এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করে পড়াশোনা করে। নৌপথ ছাড়া তাদের বিকল্প যাতায়াতের কোনো পথ নেই। কিন্তু নদীর মাঝখানে গিয়ে লঞ্চে ওঠানামায় চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নারী শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক কামাল হোসেন বলেন, “পন্টুন না থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন এলাকার রোগী, গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক যাত্রীরা। তাদের লঞ্চে ওঠাতে হিমশিম খেতে হয় স্বজনদের। পন্টুন থাকলে এমন ভোগান্তি হতো না। ”
চানপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোমেন সরকার বলেন, প্রায় এক যুগ আগে এই ঘাটে পন্টুন আনা হয়েছিল। তখন যাত্রীও কম ছিল আবার মানুষ ঠিকঠাক ভাড়া পরিশোধ না করায় ইজারাদারের পোষাতো না। পরে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে পন্টুন উঠিয়ে নেয়।
তিনি বলেন, “এখন ঘাটে যাত্রী বেড়েছে কিন্তু এই নৌপথে যাত্রী সেবার মান বাড়েনি। পন্টুন না থাকায় গ্রীষ্মকালে ঘাটে লঞ্চ ভিড়তে গিয়ে নদীর পাড় ভাঙছে আবার বর্ষা এলে ভিড়তেই পারছে না। এই সংকট, ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত ঘাটে পন্টুন স্থাপন জরুরি।”
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, “কালিকাপুর লঞ্চঘাটে পল্টুনের চাহিদার বিষয়টি কেউ আমাকে অবহিত করেননি। আমার নির্বাচনী এলাকায় জনগণের এমন দুর্ভোগ, ভোগান্তি হলে আমি অবশ্যই বিষয়টি দেখব।”
কিশোরগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ’র ভৈরব-আশুগঞ্জ নদীবন্দরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, “ওই ঘাটে আমাদের কোনো ইজারাদার নেই। একটি ঘাট পরিচালনায় বিনিয়োগ-খরচ আছে। ওই ঘাট পন্টুন দেওয়ার উপযোগী কী না পরিদর্শন করে দেখা হবে।“
তবে স্থানীয়দের আবেদন এবং ওই এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ পেলে পন্টুন স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।