গাজীপুর সিটি নির্বাচন: পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী গড়তে ১৯ দফা রনির

গাজীপুর সিটিকে জন-শিল্প-পরিবেশবান্ধব, যানজট-জলাবদ্ধতা-দূষণ মুক্ত, সুপরিকল্পিত আবাসনের নগরী হিসেবে গড়ার কথা তুলে ধরেছেন রনি।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 07:39 AM
Updated : 23 May 2023, 07:39 AM

নাগরিকসেবা সহজ ও জনবান্ধব করে পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী গড়তে ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ‘হাতি’ মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন মঙ্গলবার সকালে পৌনে ১০টায় টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় নিজ বাড়িতে তিনি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটিকে জনবান্ধব, শিল্প বান্ধব, যানজট মুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতা মুক্ত, সু-পরিকল্পিত আবাসনের নগরী হিসেবে গড়ার কথা ইশতেহারে তুলে ধরেছেন রনি।

বিএনপি পরিবারের সদস্য এই প্রার্থী ইশতেহারে গাজীপুরের উন্নয়নের তার বাবা নূরুল ইসলাম সরকার ও চাচা হাসান উদ্দিন সরকারের বিভিন্ন ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন,  “আমাদের পরিবার অত্র এলাকার উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেন। আমি পারিবারিক ঐহিত্য ও অভিজ্ঞতাকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই। ‘নগর পিতা’ নয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একজন সেবক হয়ে নাগরিকদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই। ”

১৯ দফার ইশতেহারের শুরুতেই রনি নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটিকে একটি পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে অঙ্গীকার করেন। একইসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের সকল নাগরিকসেবা সহজ ও জনবান্ধব করার ঘোষণা দেন।

Also Read: আওয়ামী লীগের কোন্দলে মানুষ ঝুঁকছে হাতিতে: রনি সরকার

গাজীপুরে শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবেন জানিয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত করারোপের ফলে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান সিটির বাহিরে অন্যত্র চলে গেছে এবং যাচ্ছে। যে সকল নাগরিক বাড়ি/কলোনি ভাড়ার আয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতেন তারা এখন দৈন্যদশায় পড়েছেন।

ইশতেহারে রনি বলেন, “নির্বাচিত হলে শিল্প-ট্যাক্স সহনীয় মাত্রায় নির্ধারণ করবো এবং শিল্পের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে একটি শিল্প ও শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবো। বিশেষ করে টঙ্গী ও কোনাবাড়ি বিসিক এবং টঙ্গীতে রাজউকের নির্ধারিত শিল্প জোনে এখনো যে সকল প্লট পতিত/পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে সেসব স্থানে শিল্প ইউনিট স্থাপনের জন্য শিল্প্যোদ্যোক্তাদের আগ্রহী করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”

এ ছাড়া যে সকল কারখানা বন্ধ বা রুগ্ন অবস্থায় রয়েছে সেসব কারখানার মালিকদের যথাসাধ্য সহযোগিতা দিয়ে কারখানাগুলো সচল করার চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। যাতে নগরবাসীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় এবং শিল্প মালিক ও বাড়ি মালিকগণ ভালো থাকেন।

বিকল্প রাস্তা সম্প্রসারণ-উন্নয়ন ঘটিয়ে ঢাকা-গাজীপুর যানজটমুক্ত যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা হবে জানিয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, “গাজীপুর শহরের সাথে ঢাকার সহজ যোগাযোগের জন্য বনমালা রোড থেকে রেল লাইনের পূর্বপাশ দিয়ে তুরাগ নদ পর্যন্ত রাস্তাটি সম্প্রসারণ করবো এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে তা কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত সম্প্রসারণ করবো। ”

গাজীপুর শহরকে একরাস্তার শহর বলা হয় তাই নগরীর পূর্ব-পশ্চিমমুখী দুটি রাস্তা নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, “নির্বাচিত হলে জয়দেবপুর জংশনের দক্ষিণপাশ এবং উত্তরপাশ দিয়ে আরও দুটি রাস্তা পূর্ব-পশ্চিমমূখী করে নির্মাণ করার উদ্যোগ নেব। রাস্তা নির্মাণ/প্রশস্তকরণে ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। ”

এ ছাড়া মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম রাস্তাগুলোর রেলক্রসিংগুলোর উপর প্রয়োজন অনুসারে ওভারপাস নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে।

একই সঙ্গে নাওজোর থেকে কাশিমপুর হয়ে জিরানী পর্যন্ত এবং গাজীপুর টু পূবাইল রোড এর কাজ দ্রুত শেষ করবেন ইশতেহারে জানিয়েছেন রনি।

আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত স্কুল-কলেজ গড়ে তোলার কথা জানিয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, “নির্বাচিত হলে ৫৭টা ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশন এর তত্ত্বাবধানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৫৭টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হবে।”

ইশতেহারে শিশুদের সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার জন্য ৫৭টি সুপরিসর খেলার মাঠ নির্মাণ করার উদ্যোগ এবং ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭টি শিশুপার্ক ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করার কথাও বলা হয়েছে।

পরিবেশের বন্ধু পাখি কমে যাচ্ছে তাই নির্বাচিত হলে পাখি রক্ষায় প্রতিটি ওয়ার্ডে দুই/তিন বিঘা জমির সমন্বয়ে অভয়ারণ্য তৈরি করবেন; একইসঙ্গে নির্বাচিত হলে টঙ্গী শিল্প এলাকার সুপ্রশস্ত রাস্তাগুলো দখলমুক্ত করে উভয়পাশে সবুজের সমারোহ ঘটাবেন বলে ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছেন রনি।

ইশতেহারে নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলোকে পরিকল্পিতভাবে খননপূর্বক দখল-দূষণমুক্ত করে স্বচ্ছ জলের আধার তৈরির কথা বলেছেন তিনি।

নগরবাসীর জীবনযাত্রার মানের সাথে সঙ্গতি রেখে সহনীয় মাত্রায় সুষম ট্যাক্স নির্ধারণ করবেন জানিয়ে তিনি ইশতেহারে বলেন, “জনগণ যেন কখনোই অতিরিক্ত ট্যাক্সের ভারে জর্জরিত না হন সেদিকে খেয়াল রাখবো। ”

ইশতেহারে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়ন ঘটানো কথা জানিয়েছেন রনি। নিজেকে তরুণ প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে এই প্রার্থী প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, এলাকার নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও মুরুব্বীদের সাথে নিয়ে পরিকল্পনামাফিক ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করার কথা বলেছেন।

ইশতেহারে নগরীর টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী, পরিকল্পনাবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, স্থপতিদের সমন্বয়ে শত বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে বায়ু ও পানি দূষণ সর্বনিম্ন মাত্রায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করবেন বলে ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছেন রনি।

তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় সকল শিল্প কারখানার জন্য কেন্দ্রীয় শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন অগ্রাধিকার দিব। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করবো এবং সকল জলাধার সংরক্ষণ করে মৎস্য চাষের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। ”

এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থানীয় জনগণ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে ইশতেহারে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হবে। ড্রেন পরিষ্কারে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির বাহনও আনা হবে।

ইশতেহারে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের জন্য সু-পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রনি। একইসঙ্গে বিভিন্ন বস্তিগুলোকে উন্নত সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইশতেহারে মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিংমুক্ত নগরী গড়ে তোলারও অঙ্গীকার করেছেন তিনি। একইসঙ্গে চেষ্টা করবেন ‘কিশোর গ্যাং’ দমন ও বিপদগামী কিশোরদের সংশোধনের আওতায় আনার।

সবশেষ ভোটকে নাগরিকদের শ্রেষ্ঠ আমানত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  “আমি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। যদি আমাকে আপনাদের যোগ্য মনে হয়, আগামী ২৫ মে ভোটের মাধ্যমে আপনাদের আমানতের সেরা বিনিয়োগ করুন। কথা দিচ্ছি, আমি আপনাদের পাশে সেবক হয়ে থাকবো ইনশা আল্লাহ।”