ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে বরিশাল বিভাগে ক্ষেতে থাকা আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, ক্ষেতে থাকা আমন ধানের শতকরা ২১ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে শীতকালীন সবজি, পান, আগাম জাতের সরিষা, খেসারি ও গম।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শওকত ওসমান বলেন, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে আমন ক্ষেতের ২১ ভাগ ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজিসহ পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে। টাকায় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে বলে জানান শওকত ওসমান।
মিধিলির প্রভাবে বরিশালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার দিনভর অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিভাগের বরিশাল জেলায় ১১৪ মিলিমিটার, ভোলায় ১২৫ মিলিমিটার, ঝালকাঠিতে ১২৪ মিলিমিটার, পিরোজপুরে ৯১.২ মিলিমিটার বরগুনায় ৯৩ মিলিমিটার ও পটুয়াখালীতে ১৪৭.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বরিশাল বিভাগে মোট ৭ লাখ এক হাজার ৯০৩ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ২০৪ হেক্টরে ধান রয়েছে। এক লাখ ৬ হাজার ৯৭৯ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া গমের আবাদ হয়েছে ৮৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৪০ হেক্টর জমির গম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৩৭৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমির ফসল।
খেসারির আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ২২৭ হেক্টর জমির খেসারি ডাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরিষার আবাদ হয়েছে ৭৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৪৭৬ হেক্টর জমির সরিষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানের আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৪১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৩৮০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, মিধিলির আঘাতে বরিশাল বিভাগের ৩২৪টি পুকুরের ১৮৩ মেট্রিক টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৪২ লাখ টাকা।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, আটটি ট্রলার এবং ৭০ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
উপকূলীয় বনাঞ্চলের বন সংরক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায়। এখনও প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ছয় কোটি টাকা মূল্যের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী বলেন, বিভাগে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
এ ছাড়া মাঠে থাকা বিভিন্ন শস্যের ক্ষতি হয়েছে। বিভাগের ৩১১টি ইউনিয়নের ২ লাখ ১৫ হাজার ১৬ জন দুর্যোগ কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩২টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ও ১ হাজার ১১১টি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।