হামলার প্রতিবাদে এক ঘণ্টা কর্মবিরতিসহ তিনদিনের কর্মসূচির ঘোষণা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
Published : 29 Jun 2024, 10:10 PM
সিলেট মহানগরীর টিলাগড় এলাকায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর ও এক যুবলীগ নেতার বাসায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় দুইটি মামলা করা হয়েছে।
মামলার পর চারজনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহপরাণ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
এছাড়া কাউন্সিলরের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে এক ঘণ্টা কর্মবিরতিসহ তিনদিনের কর্মসূচির ঘোষণা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত পৌনে ১২টার দিকে হামলা হয় যুবলীগ নেতা শমসের আলীর বাসায়।
পরে শুক্রবার রাতে কাউন্সিলর আজাদ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করে শাহপরাণ থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন, শেখ নজরুল ইসলাম বিজয় (৩০), সোহেল (৩২), রাব্বি (২২), শেখ রুহিত (২০), তারেক আহমদ (৩১), ছামাদ আহমদ (২২), ফুজায়েল মল্লিক (২০), ইয়াকীন (২০), নাসির (২৩), মুছা খান তপু (২১), শাওন (২৩), রিয়াজুল, মো. রাহেল উদ্দিন রাবেন, বোরহান (২৫)।
অভিযোগে আজাদ উল্লেখ করেন, আসামিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপকর্ম করায় স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন আজাদ। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে ও তার বাসায় হামলা করে।
এর জেরে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে পেট্রলভর্তি জারিক্যান, আগ্নেয়াস্ত্র, মশাল, হকিস্টিক, রামদা, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আজাদুর রহমানের বাসার সামনে মারমুখী অবস্থান নেয় হামলাকারীরা।
আজাদ তাদের জড়ো হওয়া কারণ জিজ্ঞেস করায় হামলাকারীরা চিৎকার করে বলে, ‘আমরা তোর যম, আজ তর জীবনের শেষ দিন।’ এ কথা বলেই বাসায় এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে তারা। এতে বাসার প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে আসামিরা গুলি করতে করতে এলাকা ত্যাগ করে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
চলে যাওয়ার সময় আসামিরা আজাদুর রহমানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে বাসায় হামলা, চাঁদাবাজি, প্রাণনাশের হুমকি, লুটপাটসহ কয়েকটি কারণে থানায় অপর মামলাটি করেছেন সিলেট মহানগর যুবলীগের সদস্য শমসের আলী সার (৪৫)।
তিনি ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করেছেন।
এ মামলায় আসামিরা হলেন- শেখ নজরুল ইসলাম বিজয় (৩০), ছামাদ আহমদ (২২), রাব্বি (২২), রিয়াজুল (২৪), ফুজায়েল মল্লিক (২০), ইয়াকীন (২০), সোহেল (৩২), বোরহান (২৫), নাসির (২৩), মো. রাহেল উদ্দিন রাবেন (৩২), তারেক আহমদ (৩১), মুছা খান তপু (২১), শাওন (২৩), শেখ রুহিত (২০), হারুনুর ইসলাম (২০), সাব্বির (২১), সাইফুল ইসলাম ছফু (৩৭)।
মামলায় যুবলীগ নেতা শমসের আলী অভিযোগ করেন, বুধবার দুপুরে আসামিরা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে আসামিরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এরপর বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ আসামিরা তার বাসা ও দোকানে ঢুকে আবারও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার ভয় দেখায়। তখন তিনি টাকা নাই বলে অনুনয়বিনয় করেন।
এ সময় আসামিরা বাসায় ও দোকানে ভাঙচুর করে আনুমানিক তিন লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। তার দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা ৩৬ হাজার টাকাসহ দুই লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে।
একইসঙ্গে আসামিরা বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করার পর তার স্ত্রীর বুকে পিস্তল ধরে গলার থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন, আলমারিতে থাকা আড়াই লাখ টাকা, স্ত্রীর পাঁচ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুট করে।
এছাড়া আসামিরা বাসার অন্য সদস্যদের এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
নগর পুলিশের শাহপরাণ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, “মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
গ্রেপ্তাররা হলেন- নজরুল ইসলাম বিজয়, ফুজায়েল মল্লিক, তারেক আহমদ ও রাহেল উদ্দিন। তারা সবাই টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা।
তিন দিনের কর্মবিরতি সিলেট সিটি করপোরেশনের
এদিকে কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের বাসভবনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় এক ঘণ্টা কর্মবিরতিসহ তিনদিনের কর্মসূচির ঘোষণা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
শনিবার নগর ভবনের সভাকক্ষে সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, ‘কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে তিনদিনের কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত নগর ভবনসহ ৪২টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে একযোগে ১ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হবে।
এছাড়াও পরদিন সোমবার টিলাগড় পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি এবং মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
জরুরি সভায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
সভায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডের সাধারণ, সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।