গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি; প্রতিবেদন দেবে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে।
Published : 06 Mar 2024, 08:20 PM
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ভুল চিকিৎসায় দুই নবজাতকের মৃত্যু ও ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক দিয়ে অস্ত্রোপচার করার অভিযোগে দুটি বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল দুটি বন্ধের কথা জানান শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবদুল হাদী মো. শাহ পরান।
বন্ধ করে দেওয়া হাসপাতাল দুটি হল- গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ঢালী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল এবং গরীবে নেওয়াজ হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিক।
নিহত নবজাতকের স্বজনরা জানান, গত সোমবার উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান আজাদের স্ত্রী নাদিয়া বেগম প্রসব বেদনা নিয়ে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয় নবজাতক।
স্বজনদের অভিযোগ, নবজাতকের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করেন হাসপাতালটির নার্স ও ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক। চিকিৎসা করতে গিয়ে তারা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে নবজাতকের বুকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
অতিরিক্ত চাপে অবস্থা খারাপ হলে তড়িঘড়ি করে নবজাতকটিকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন তারা। কিন্তু পথেই শিশুটির মৃত্যু হয়।
ভুল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসায় নাতি মারা যায় অভিযোগ করে নবজাতকের নানা মো. আবু তাহের বলেন, “এর আগে আমার এক আত্মীয়ের নবজাতক ভুল চিকিৎসায় এই হাসপাতালে মারা গিয়েছিল। ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করলে নবজাতক তো মারা যাবেই। টাকার জন্য ওরা এভাবে মানুষকে মেরে ফেলে। আমার নাতি মারা গেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।”
শিশুটির বাবা হাবিবুর রহমান আজাদ বলেন, “আমার সন্তান সিজারের পরও ভালো ছিল। কান্নার শব্দ আমরা শুনেছি। তারা আমার সন্তানকে আমার কাছে না দিয়ে বুকের মধ্যে অনবরত চাপ দিতে থাকে। আধা ঘণ্টা চেপে জখম করে বলে, আমরা এখানে কিছু করতে পারব না। আপনারা ওকে আইসিইউতে নিয়ে যান।
“এরপর আমার সন্তানকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। আমি এর বিচার চাই।”
এর আগের দিন রোববার একই হাসপাতালের গোসাইরহাট ইউনিয়নের খাট্টা গ্রামের আল আমিন মাঝির স্ত্রী রেখা আক্তারের সিজারের পর সদ্য নবজাতক মারা যাওয়ার অভিযোগ পান সিভিল সার্জন আবুল হাদী মো. শাহ পরাণ।
অপরদিকে, গরীবে নেওয়াজ হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে মানসম্পন্ন কোনো চিকিৎসক নেই এবং স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছিল।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার হাসপাতাল দুটি সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন আবুল হাদী মো. শাহ পরাণ আরও জানান, এসব ঘটনায় হাসপাতাল দুটি বন্ধের পাশাপাশি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তবে সাময়িকভাবে বন্ধ করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হাসপাতাল দুটির কর্তৃপক্ষ।