সিনেট অধিবেশন উপলক্ষে আয়োজন করা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকে ‘লোক-দেখানো’ অ্যাখ্যা দিয়ে বয়কট করেছেন বিএনপিপন্থী সিনেটররা।
Published : 29 Jun 2024, 11:18 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৩১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বাজেট পাস হয়েছে।
যার মধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে সাত কোটি ২২ লাখ টাকা। এই বরাদ্দকে ‘খুবই অপ্রতুল’ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যরাই।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে ৪১তম সিনেট অধিবেশনে এ বাজেট পাস হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার।
এবার ৩১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বাজেট বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ২৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা অনুদান দেবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সূত্রে ৩৯ কোটি টাকা ৩২ লাখ টাকা আয় হবে।
বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা; যা মোট বাজেটের ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। পেনশন ও অবসরকালীন সুবিধা বাবদ বরাদ্দ ৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকা; যা মোট বাজেটের ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ শতাংশ।
পণ্য ও সেবা (সাধারণ আনুষাঙ্গিক) ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা; যা মোট বাজেটের ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ। পণ্য ও সেবা (রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত) ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা; যা মোট বাজেটের ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ০.১৫ শতাংশ। গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
তবে গুরুত্বপূর্ণ এই খাত দুটিতে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যরা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য (শিক্ষক প্রতিনিধি) অধ্যাপক গোলাম রব্বানি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যে গবেষণা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এই বাজেট সেটার প্রমাণ। স্বাস্থ্য ও গবেষণা খাতের এই অপ্রতুল বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।
“প্রতিবারই এসব নিয়ে কর্তৃপক্ষকে বলা হয় কিন্তু তারা এসবে কান দেয় না। তবে আমরা এসব নিয়ে কথা বলেই যাব নিয়মিত।”
এবারের সিনেট অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও পেশ করা হয়। সংশোধিত বাজেটের আকার ৩১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ বছর সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ১৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বিএনপিপন্থী সিনেটরদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বয়কট
এদিকে সিনেট অধিবেশন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। তবে ‘লোক-দেখানো’ অ্যাখ্যা দিয়ে তা বয়কট করেছেন বিএনপিপন্থী সিনেটররা।
সিনেট সদস্য ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন না করে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে নির্বিচারে গাছ কেটে এভাবে লোক দেখানো বৃক্ষরোপণ প্রশাসনের স্ববিরোধীতা। এই কর্মসূচি পালনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে জানানোও হয়নি। এটা বিএনপিপন্থী সিনেটরদের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। তাই এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বয়কট করেছি।”
সাংবাদিকদের সিনেট অধিবেশন বয়কট
এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনে ‘অসহযোগিতা’ করায় সিনেট অধিবেশন বয়কট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা।
জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদেরকে চিঠি দিয়ে সিনেট অধিবেশনে ডাকা হয়েছে; ডেকে অপমান করা হয়েছে। আলাদা কক্ষে বসতে দেওয়া, ছবি তুলতে না দেওয়াসহ সংবাদ সংগ্রহে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।
“অথচ দেশের বাজেট পাস হয় জাতীয় সংসদে সেখানে এরকম কোনও বাধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাংবাদিকদের নিয়ে কীসের এত ভয়? কর্তৃপক্ষের এরকম আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”
জাবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নোমান বিন হারুন সিনেট অধিবেশন বয়কটের ব্যাপারে বলেন, “বিগত বছরগুলোতে প্রতিটি সিনেট অধিবেশনে সাংবাদিকরা সংবাদ পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রিত হয়ে আসছেন। তবে এবার আমন্ত্রণপত্র থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাংবাদিকদের সাথে সর্বোচ্চ অসহযোগিতামূলক ভূমিকা প্রদর্শন করেছে।
“মূল সিনেট ভবনে আসন ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও আমাদের জন্য চারতলায় পৃথক গ্যালারিতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে সিনেটরদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে দেখা ও শোনা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “এমনকি উপাচার্যের ভাষণের পুস্তিকা ও বাজেট বরাদ্দের বইটিও সরবরাহ করা হয়নি। মূলত, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য পরিবেশ ও উপকরণ না পাওয়ায় আমরা সিনেট সভা বয়কট করেছি।”