একযোগে ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ ছুটি ছিল বলে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান।
Published : 08 Jan 2023, 08:25 PM
কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার ‘সব’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের ছেলের বৌভাতে অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলায় একযোগে ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ ছুটি ছিল বলে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, “তিন উপজেলায় শৈত্যপ্রবাহ বিদ্যমান থাকায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজের ক্ষমতায় একদিনের সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করেছেন। প্রধান শিক্ষক বছরে তিনদিন ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সেই সংরক্ষিত ছুটি থেকে আজকের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়টি শিক্ষা বিভাগ অবহিত আছে।”
নিজেও মন্ত্রীর ছেলের বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার কথা বলেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
শিক্ষক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী) আসনের সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের রৌমারীর বাসভবনে তার ছেলে সাফায়েত বিন জাকিরের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা (বৌভাত) ছিল। সেই বৌভাতের দাওয়াতে যেতে শিক্ষকদেরকে দিতে হয়েছে বাধ্যতামূলক চাঁদা। তিন উপজেলার এক হাজার ৩০০ শিক্ষকের কাছ থেকে উত্তোলিত প্রায় ছয় লাখ টাকায় ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, স্বর্ণসহ দেওয়া হয় নামিদামী উপহার।
কোনো বিশেষ দিবস বা জরুরি কারণ ছাড়াই বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ভিন্ন ভিন্ন কারণ দেখালেও শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল।
সরেজমিনে মজাইডাঙ্গা, দক্ষিণ রাধাবল্লভ, রাণীগঞ্জ বাজার, ফকিরেরহাট, খালেদা শওকত পাটওয়ারী, চর খরখরিয়া, নিরিশিং ভাজ, রানীগঞ্জ মদন মোহনসহ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে সবগুলোতে তালা ঝুলতে দেখা যায়।
কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তাদের কেউ কেউ শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্কুল বন্ধ রাখার কথা জানান। তবে শিক্ষকদের কেউ কেউ ‘সংরক্ষিত ছুটির’ বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের দাওয়াতের কথা বলেন। তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।
চিলমারীর বালাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের বাসিন্দা আব্দুল হাই সরকার বলেন, “আজ কোনো সরকারি ছুটি নয়। তারপরও স্কুলে ক্লাস হয়নি। প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে যেতে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।”
এই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মফিজুল ইসলাম বলেন, “আমার ছেলে এই স্কুলে পড়ে। এভাবে স্কুল কামাই করে শিক্ষকরা বিয়ে খেতে যাওয়া হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নাই। এমনি প্রাইমারিতে ক্লাস হয় না ঠিকঠাক। মাস্টারও আসে না নিয়মিত। গরিবের পড়ালেখা হোক আর না হোক তাতে কার কী?”
আরেক অভিভাবক নোয়াব আলী বলেন, “সকালে থানাহাট ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা তুলে রেখে শিক্ষকরা সবাই প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে গেছে। আজ কোনো ক্লাস হয়নি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “আমাদেরকে বলা হয়েছে, একটা ক্লাস নিয়ে দাওয়াতে যেতে। তবে কোনও ক্লাস নেওয়া হয়নি। বিয়ের উপহার কেনার জন্য সবার কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছিল। পরে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি রৌমারীতে মন্ত্রীর ছেলের বিয়ের দাওয়াতে আছি। এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো।”
এদিকে বিষয়টি ‘অবগত’ বলে জানালেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তিন উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি চলছে তা তিনি অবহিত হয়েছেন। তিনি বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকদের হাতে বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তারা বছরের যেকোনো সময় এই ছুটি দিতে পারেন।