মিশনে নিহত শরিফ ছিলেন পরিবারের অবলম্বন

এসএসসি পাশের পর ২০১৭ সালে সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন শরিফ হোসেন।

ইসরাইল হোসেন বাবুসিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2022, 01:35 PM
Updated : 5 Oct 2022, 01:35 PM

পরিবারের মূল উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল শরিফের স্বজনরা। কোনো সান্ত্বনাই তাদের কান্না থামাতে পারছে না।  

সোমবার মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত অবস্থায় বোমা বিস্ফোরণে গাড়ি উল্টে শরিফ হোসেনসহ তিন বাংলাদেশি সৈনিক নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন একজন। 

শরিফের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার পৌরসভার বেঁড়াখারুয়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা স্বজনরা।  

বুধবার সকালে নিহত এই সেনাসদস্যের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় সেখানে জড়ো হয়েছেন শোকার্ত স্বজন-শুভানুধ্যায়ীরা।

নিহত ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে রেখেছেন মা পাঞ্জুয়ারা বেগম।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “খলিফার কাজ করে অন্যের বাড়ির সুতা তুলে ছেলেকে বড় করেছিলাম। আমার ওই ছেলেও তাঁতের কাজ করেছে, ওর বাবা বেকার, ছোট ছেলেও তাঁতের কাজ করে। ছোট মেয়ে লাকি এইচএসসিতে পড়ছে। চাকরি নেওয়ার পর বড় ছেলেই ছিল একমাত্র ভরসা ও একমাত্র অবলম্বন। বিদেশ থেকে এসে ছোট বোনকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল, আমরা পাত্রও ঠিক করে রেখেছি।”

এখন ছেলের অবর্তমানে চোখে অন্ধকার দেখছেন এই পরিবারের সদস্যরা। তিনি সরকারের সহায়তা চেয়েছেন।

এক বছর আগে শরিফ বিয়ে করেছেন। এখনও কোনো সন্তান হয়নি। স্বামীর শোকে বিহ্বল স্ত্রী সালমা খাতুন শুধু কান্না করছেন আর বলছেন, “আল্লাহ আমার স্বামীরে নিয়ে গেছে, আমি এখন কী করমু।”

শরিফের ছোটভাই কাওসার তালুকদার এসএসসি পাশ করেছেন। কাজ করেন তাঁত শ্রমিকের।

কাওসার বলেন, “বড় ভাইয়ের আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে সে মারা গেছে। সেনাবাহিনী বা সরকার যদি আমাকে একটা চাকরি দিত, তাহলে আমি পরিবারের হাল ধরতে পারতাম।”

শরিফের বাবা লেবু তালুকদার বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, আমি নিজেও বেকার, সেনাপ্রধান যদি আমার ছোট ছেলেকে একটা চাকরি দিত, তাহলে বাঁচতাম। হয়তো সংসারটা চলত। তা না হলে আমরা একেবারে পথে বসে যাব।” 

প্রতিবেশী মাহমুদুল হাসান বলেন, বুধবার সকালে বগুড়া ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর একটি টিম বাড়িতে এসেছিল, তারা সেনা প্রধানের পক্ষ থেকে শোকাহত শরিফের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং নগদ এক লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করেছেন। এছাড়াও শরিফের কর্মস্থল সিলেট থেকেও সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।

স্বজনরা জানান, ২ ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরিফ ছিলেন সবার বড়। এসএসসি পাশের পর ২০১৭ সালে তিনি সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সিলেট সেনানিবাস ছিল তার কর্মস্থল। এক বছরের জন্য মধ্য আফ্রিকায় শান্তি রক্ষা মিশনে যোগ দিতে গত বছরের ২ ডিসেম্বর দেশত্যাগ করেন শরিফ।