“জানি না কে কখন চলে যাবো। যাওয়ার আগে অন্তত আজকের দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
Published : 15 Jan 2025, 08:16 PM
দীর্ঘদিন পর ঠাকুরগাঁওয়ে স্কুলের সহপাঠীদের কাছে পেয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাদের সময় কেটেছে হাসি, গান আর আড্ডায়। সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন শৈশব-কৈশরে।
বুধবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় হাওলাদার হিমাগার চত্বরে শৈশবের বন্ধুদের আয়োজনে মিলনমেলা বসেছিল।
সেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার এক ফাঁকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতা আবৃত্তি করেন মির্জা ফখরুল। আবৃত্তি শুরুর আগে এটি ‘সবচেয়ে প্রিয় কবিতা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুলের ছোটভাই ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, “অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার শৈশবের বন্ধু, এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, সিনিয়র-জুনিয়র অনেকের সঙ্গে সারাদিন সময় কাটিয়েছেন। এটি উনার একান্ত ব্যক্তিগত প্রোগ্রাম ছিল। অনুষ্ঠানস্থলে দুটি পুকুর ছিল। সেখানেই বসে সময় কাটিয়েছেন সারাদিন।”
অনুষ্ঠানে অনেকে উপস্থিত থাকলেও মধ্যমণি ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে স্মরণ করেন ফেলে আসা দিনের কথা। শৈশবের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, “আমার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু কুদ্দুস আমাদের মাঝে থেকে অনেক আগেই চলে গেছে। মনোয়ার চলে গেছে, যার সঙ্গে সারাদিনে একবার দেখা না হলে খারাপ লাগতো। অনেকেই আমাদের কাছ থেকে চলে গেছে। যারা এখনো বেঁচে আছি, আমরা একটু বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। এই বাঁচাটা হচ্ছে নিজেকে অনুভব করা আমি আছি, আমি বেঁচে আছি।
“আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ। আজ সকালে বন্ধু আনিসুরকে দেখতে গেছিলাম। একেবারেই শয্যাশায়ী, নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছে। জানি না আমরা কে কখন চলে যাবো। কিন্তু যাওয়ার আগে অন্তত আজকের দিনটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
স্কুল-জীবনের স্মৃতিচারণে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “স্কুলে খুবই দুষ্টু ছিলাম। বখরান সাহেব ছিলেন আমাদের ক্যাপ্টেন। আমরা দুষ্টুমি করতাম আর ক্যাপ্টেন আমাদের নামে হেড স্যার রোস্তম আলী স্যারকে নালিশ করলেন। তার কিছুদিন পর হেড স্যার আমাদের সবাইকে ডেকে পাঠালেন। ঘরের ভেতরে লাইন করে দাঁড় করালেন এবং সবাইকে একটা করে বেত দিলেন মারলেন। আমাদের সেই শৈশব ও স্কুলের জীবন আমি কখনোই ভুলতে পারি না। আমার সবসময় মনে আমার সেই দিনগুলো যদি আমার ফিরে পেতাম।
“স্বাধীনতার পরে বন্ধুদের সঙ্গে রংপুরে এক কাজে গিয়েছিলাম। রাতের বেলা কী করবো? তাই ঠিক করলাম সিনেমা দেখবো। কিন্তু সিনেমা দেখার জন্য তখন আমাদের হাতে টিকিট ছিল না। তারপরও ভিড় ডিঙিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা করে সিনেমা দেখেছি। এগুলো আমার কাছে এখনো মধুর স্মৃতি হয়ে আছে।”
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তির অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, “এক সময় আবৃত্তি করতাম, এখন করি না, এখন বক্তৃতা করি। তারপরও আমি চেষ্টা করবো। কারণ এক সময় আমিও নাটক করেছি, রং মেখেছি, একসময় নাট্যগোষ্ঠী করতাম।” পরে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ আবৃত্তি করে শোনান বন্ধুদের।
মির্জা ফখরুলের ভাই মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, “এখানে একটি নিক্কণ সংগীত বিদ্যালয় রয়েছে। এটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই নিক্কণের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে সংগীত পরিবেশনা করেছেন এবং তাদের অনুরোধেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল একটি কবিতা আবৃত্তি করেছেন।”
বিকালে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আয়োজনের সমাপ্তি হয়।