Published : 13 Nov 2024, 03:47 PM
ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে সতর্ক না হলে বড় বিপদে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি এলাকার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “ফ্যাসিবাদের প্রধান হোতা শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন এবং ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে; এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।
“এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। নাহলে জাতি হিসেবে আমরা অনেক বড় বিপদের সম্মুখীন হব।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশের এই যে অর্জন, এই অর্জনকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কিছু ব্যক্তি চেষ্টা করছে। আমি এই ব্যাপারে সকলকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাব। আমরা এই মুহূর্তে আরেকটা বিপর্যয় গ্রহণ করতে পারি না।”
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে ‘মতামত দেওয়া সমীচীন নয়’ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমি গণতান্ত্রিক একজন ব্যক্তি, আমি বিশ্বাস করি যে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়টা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, এটা জনগণের দায়িত্ব।
“জনগণ মতামত দেবে- কে রাজনীতি করবে আর কে রাজনীতি করবে না। এবং নির্বাচনে যারা জনগণের কাছে খারাপ হয়ে যাবে তারা বাতিল হয়ে যাবে অথবা পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত নেবে।”
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের আমলের চেয়ে অনেক ভালো উল্লেখ করে কারণ হিসেবে ফখরুল বলেন, “প্রথমত হচ্ছে- এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারও নিয়ন্ত্রণে নেই; দ্বিতীয়ত হচ্ছে- একটা ভয়াবহ ধ্বংসের মধ্য থেকে তাদের তুলে এনে, যেখানে পুলিশ বাহিনী ফেইল করেছিল, সেখান থেকে তাদের নিয়ে এসে একটা সিস্টেমের মধ্যে, দেশপ্রেমের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এটা বিরাট সফলতা।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও সফল হবে বলেও তিনি আশা করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে রংপুর বিভাগের কোনো উপদেষ্টা না থাকার বিষয়েও সাংবাদিকরা মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার। উনি উনার মেধা, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা দিয়ে বিবেচনা করবেন; যদি কোনো সমস্যা থাকে সেটার সমাধান করবেন। আর যদি দেখেন কোথাও কোনো অসামঞ্জস্য হচ্ছে সেটাও তিনি দূর করবেন, আমি এটা প্রধান উপদেষ্টার উপর ন্যস্ত করতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে উপদেষ্টা নিয়োগ করার কোনো প্রচলন নাই; এটা প্রধান উপদেষ্টার নিজস্ব এখতিয়ার। তাদের সুবিধার জন্য যাকে যাকে নেওয়ার দরকার তাকে নেবে।”
সবাইকে সহিষ্ণু থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “১৭ বছরের একটা জঞ্জাল-একটা গার্বেজ তৈরি করা হয়েছে, এটাকে সরানো ১৭ দিনে সম্ভব না, ১৭ মাসেও সম্ভব না, এটাই সত্য। এজন্য যারা অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন তাদেরকে সময় দিতে হবে।
“তাদের প্রধান যে দায়িত্ব সেটা আমরা বারবার করে বলেছি- সবগুলো সংস্কারে হাত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন নেই বলে মনে করি। নির্বাচিত যে পার্লামেন্ট আসবে পার্লামেন্ট সেই সংস্কারের কাজগুলো করবে।”
সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা রিজেক্ট করেছি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন সম্ভব না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই জাতিকে রক্ষা করতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো ঐক্য; ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকার যে কাজটা খুব সফলভাবে করেছে সেটা হলো- জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এই বিভক্তিটা দূর করে আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই।
“একটা গণতান্ত্রিক সমাজে-ব্যবস্থায় একেক জনের একেক রাজনৈতিক মত থাকবে; কিন্তু ঐক্যটা থাকবে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে, একটা হলো- বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের বিষয়ে, আরেকটা হচ্ছে গণতন্ত্রের বিষয়ে, দেশের মানুষের অধিকারের বিষয়ে।”
ঐক্যের বিষয়ে তার চেষ্টা করে সফলও হয়েছেন জানিয়ে ফখরুল বলেন, “এই চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা ৬৩টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করেছি; ডান-বাম মধ্য সবগুলোকে একত্রে নিয়ে; সেদিক থেকে আমরা বলব অনেকটা কাজ হয়েছে। চূড়ান্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন হয়েছে।”
এর আগে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।