১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৯০ একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে ‘গজনি অবকাশ’ গড়ে তোলা হয়।
Published : 02 Apr 2025, 05:53 PM
এবারের ঈদের লম্বা ছুটিতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ‘গজনী অবকাশ’ কেন্দ্রে ভিড় করছেন বিপুল সংখ্যক ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
ভারত সীমান্ত সংলগ্ন গারো পাহাড়ের কোলে অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের দিন থেকেই ঢল নেমেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীর।
কেউ আসছেন পুরো পরিবার নিয়ে, আসছেন দম্পতিরা, আবার কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততা ও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলতে এ পর্যটন কেন্দ্রের নৈসর্গিক প্রকৃতিতে ছুটে এসেছেন তারা।
সোমবার ঈদের দিনের পর মঙ্গলবার-বুধবারও শাল, গজারী, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, লতাপাতার বিন্যাসের এই বিনোদেন কেন্দ্রটি পর্যটকদের পদচারণা মুখর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গজনী অবকাশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা নিজ ও প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন মোবাইল ফোনে।
বিশেষ করে শিশুদের জন্য নির্মিত চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক ছিল মুখরিত। সেখানে বিভিন্ন রাইডে চড়ে ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। শিশুদের ভিড়ে সকাল থেকেই এ পার্কের ফটকে লম্বা লাইন দেখা যায়। তাদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককেও আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়।
সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে পার্কে এসেছেন মো. মেজবাউল ইসলাম। তিনি বলেন, “ঈদ তো শিশুদের। তাই মেয়েকে নিয়ে এলাম। অনেক ভিড়। একেকটা রাইডে উঠতে প্রচুর সময় চলে যাচ্ছে। তারপরও মেয়েটা আনন্দ পাচ্ছে। তাতেই আমি খুশি।”
এছাড়া গজনী বোট ক্লাবের নৌকায় চড়ে পর্যটন কেন্দ্রের লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্যেও পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন দেখা মিলল।
বকশিগঞ্জ থেকে আসা বিদ্যুৎ ও জেরিন দম্পতি বলেন, তারা গাজীপুরে থাকেন, ঈদের ছুটিতে শহরের কোলাহল ছেড়ে গজনী অবকাশে ঘুরতে এসেছেন।
তারা বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রে তৈরি কৃত্রিম দৃশ্যগুলোও তাদের মনে অনেক আনন্দ দিয়েছে। প্রকৃতির মাঝে পর্যটকদের জন্য তৈরি এসব স্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তারা।
একই কথা জানান ময়মনসিংহ শহর থেকে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটক।
তারা জানান, পাহাড়-টিলা আর সমতল ভূমিতে সবুজের সমারোহ উপভোগ করতেই তারা এসেছেন। কিন্তু এখানে গারো পাহাড়ের পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে তৈরি বিভিন্ন রাইড দেখে তারা বিমোহিত হয়েছেন।
গজনী অবকাশ কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘গজনি অবকাশ’। জেলা শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে এর অবস্থান।
এই পর্যটন কেন্দ্রের প্রকৃতির মায়াময় সৌন্দর্য সব বয়সের মানুষকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে। তার মধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিশু পার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, ঝুলন্ত সেতু, ঝর্ণাধারা, পদ্মসিড়িসহ বেশ কিছু স্থাপনা ও বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া পাহাড়ের বুক জুড়ে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে। লেকের পাড়ে এই পথ ধরে হেঁটে যাওয়া যায় এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে।
পড়ন্ত বিকালে গজনী অবকাশ কেন্দ্রের লেকে ঘোরার জন্য রয়েছে ছোট ছোট নৌকা। পাহাড়ের পাদদেশে কফি আড্ডা আর গান এখানে আগত দর্শনার্থীদের জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
এছাড়া গারো মা ভিলেজে মাশরুম ছাতার নীচে বসে বা পাখির আদলে তৈরি বেঞ্চে বসে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্ত জোড়া ধান ক্ষেত আর পাহাড়ি জনপদের ভিন্ন জীবনচিত্র উপভোগ করা যায় সহজেই।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, এর মধ্যেই গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পর্যটকের বিনোদনের জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা আছে। সম্প্রতি আরও কিছু রাইড বাড়ানো হয়েছে। আগামীতে তা আরও বাড়ানো হবে।
“সব মিলিয়ে এবার গজনী অবকাশ কেন্দ্র পর্যটকদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে ঈদের ছুটিতে এবার প্রচুর দর্শনার্থী গজনী অবকাশ কেন্দ্রে ঘুরতে আসছেন।”
পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্গলা বাহিনীও বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। এতে তাদের ভালো বেচা-কেনা হচ্ছে।
পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বলেন, ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। ঈদের ছুটির বাকি ক’দিনও পর্যটকের সংখ্যা এমন থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।
পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন রাইডের ইজারাদার মো. ফরিদ মিয়া বলেন, “ঈদের দিন থেকেই প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন হচ্ছে। আশা করছি টানা ছুটির সব দিনেই দর্শনার্থীরা আসবেন।”
ঝিনাইগাতী থানার ওসি মো. আল-আমীন বলেন, “ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশে দর্শনার্থী বেড়েছে। তারা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারে তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।”