“লোকজনের হাতে টাকা কম, আগের মত লোকজন বাড়ির কাজ করছে না। শুধু জরুরি কাজগুলোই করছে। তাই আমাদের চাহিদাও কমে গেছে।“
Published : 04 Jan 2025, 05:23 PM
তীব্র শীতের মধ্যেও ভোরে হাজির হয়েছেন, কমিয়ে দিয়েছেন শ্রমের মূল্য, তবুও খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বগুড়ায় দিনমজুরের হাটে আসা শ্রমিকদের। কারণ হাটে শ্রম বিক্রেতার ভিড় থাকলে কমে গেছে কেনার লোক।
প্রতিদিন ভোরে বগুড়া শহরের নামাজগড়, কলোনী বাজার ও শহরতলীর মাটিডালীতে বসে এই দিনমজুর কেনা-বেচার হাট।
এর মধ্যে নামাজগড় ও কলোনী হাটে রাজমিস্ত্রী, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী, টিনের বাড়ি মেরামত মিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, টাইলস মিস্ত্রী, সাবমার্সিবল মিস্ত্রী এসব দিনমজুর পাওয়া যায়। আর মাটিডালীতে পাওয়া যায় কৃষি জমিতে কাজ করার দিনমজুর।
সদর উপজেলাসহ আশেপাশের গাবতলী, কাহালু, শাহজাহানপুর উপজেলা থেকে দেড় থেকে দুই হাজার দিনমজুর প্রতিদিন এসব হাটে উপস্থিত হন। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দক্ষতা-যোগ্যতা অনুযায়ী দরদাম করে তাদের শ্রম কিনে নেন।
তবে, হাঁটগুলোয় এখন কমে গেছে ক্রেতা। কম মজুরিতে রাজি হয়েও মিলছে না কাজের সুযোগ। ফলে মলিন মুখে শূন্য হাতেই ফিরতে হচ্ছে দিনমজুরদের।
শনিবার শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে দিনমজুর হাটে গিয়ে দেখা গেল দিনমজুররা ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে এবং বসে আছেন। সঙ্গে আছে ঝুড়ি, কোদাল, হাতুড়িসহ বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
কেউ ওইসব হাটে নামলেই তাকে ঘিরে ধরছে সবাই। বলছে- “কি লেবার লাগবে?” এমনকি কেউ অন্যকাজে আসলেও তাকে ঘিরে ধরছেন দিনমজুররা। এতে লোকজন বিব্রতও হচ্ছে।
গাবতলী উপজেলার নশিপুর গ্রামের ৬০ বছরের ছবেদ আলী ভোরেই নামাজগড় হাটে এসেছিলেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টায়ও ক্রেতা না পেয়ে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, “ঘন কুয়াশার মাঝে শীতের কষ্ট উপেক্ষা করে হাটে এসেছি। কিন্তু কাস্টমার কম। এখনও ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় মিস্ত্রী কেনাবেচা হচ্ছে। জুয়ান লেবারদের চাহিদা বেশি। আমি বয়স্ক তাই আমার চাহিদাও কম। কাজ পেলাম না। ফিরে যাচ্ছি।”
তারমতো আরও অনেককেই দেখা যায় কাজ না পেয়ে ফিরে যেতে ।
শহরতলীর মাটিডালী হাটে কৃষিকাজের দিনমজুরের বাজার আরও মন্দা। এখন মাঠে তেমন কাজ না থাকায় দিনমজুরের চাহিদাও কম।
আশরাফ আলী নামের সদরের কালিবালা এলাকার দিনমজুর সকাল সাড়ে ৯টায় বলেন, “বসে আছি। কাস্টমার কম। একজন ৪০০ টাকা দর করছে। রাজি হইনি এখনও। আরও কিছু সময় দেখবো না হলে সেই টাকাতেই রাজি হয়ে যাব। বাড়িতে বসে থাকলেতো পেটে ভাত যাবে না।”
তবে ক্রেতা পেয়েছেন বগুড়া সদরের হাজরাদিঘীর জসিম উদ্দিন, বিক্রি হয়েছেন ৬০০ টাকায়।
তিনি বলেন, “বেশি দামাদামি করিনি কারণ, পরে যদি কাস্টমার না পাই।”
শহরের বাদুরতলার ক্রেতা শরিফ আহাম্মেদ বলেন, “এখন ক্রেতার চেয়ে দিনমজুরই বেশি। এখন কেউ ৬০০, কেউ ৭০০ দাম চাইছে। ঘুরে ঘুরে দেখছি। একটু পরেই ৫০০ টাকাতেই পেয়ে যাব।”
শহরতলীর হরিগারীর রাজমিস্ত্রী হাসান আলী বলেন, “লোকজনের হাতে টাকা কম, আগের মত লোকজন বাড়ির কাজ করছে না। শুধু জরুরি কাজগুলোই করছে। তাই আমাদের চাহিদাও কমে গেছে।
“এখন প্রায় অর্ধেক লেবার কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। কাজের অভাবে আমরাও কষ্টে আছি।”
বগুড়া কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মাতলুবুর রহমান বলেন, এখন মাঠে স্বল্প পরিসরে কাজ চলছে। আলুও রোপন শেষ। মাঠে তেমন কাজ না থাকায় কৃষি শ্রমিকের চাহিদা কম। তাই মজুরীও কমে গেছে।
“ইরি-বোরো চাষ পুরোপুরি শুরু হতে এখনও ২০-২৫ দিন। তখন আবার কৃষি শ্রমিকদের চাহিদা তৈরি হবে।”