চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও রোগীদের ভিড় লেগে রয়েছে। এরই মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
Published : 30 Aug 2024, 01:20 PM
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করায় পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। সেইসঙ্গে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগবালাই।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চৌদ্দগ্রাম সদরের মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে রাস্তাঘাট, বাড়িঘরে এখনো পানি আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে চৌদ্দগ্রামে একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন আড়াই লাখের বেশি মানুষ।
উপজেলার ২৯টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন বন্যাকবলিত ২০ হাজার মানুষ। পানি কমার পর তারা ফিরতে শুরু করেছেন বাড়িতে।
পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে ভেসে উঠছে ময়লা-আবর্জনা। ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। তার মধ্যে ডায়রিয়াসহ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বানভাসিরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। দূষিত পানি পান ও বন্যার পানিতে চলাফেরার কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটে ব্যথা, জ্বরের পাশাপাশি চর্মরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও চোখের প্রদাহের রোগীর সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও রোগীদের ভিড় লেগে রয়েছে। এরই মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন ৬০ জন। এরমধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ২০ জন নারী ও ২৪ জন শিশু। তাদের ৩৬ জনই ডায়রিয়া আক্রান্ত। শিশুদের বেশিরভাগই ভুগছে ডায়রিয়ায়।
চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাট এলাকার নূরজাহান আক্তার তার ৩ বছর বয়সী মেয়ে আদিবাকে নিয়ে বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি বলেন, বন্যার পানিতে সাত দিনের বেশি ঘরবন্দি ছিলাম। মঙ্গলবার দুপুর থেকে মেয়ের ডায়রিয়া শুরু হয়। পরে পানি অতিক্রম করে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর চাপে ডায়রিয়ার কোনো ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের দুর্ভোগ চরমে।
আবুল বাশার নামে একজন বলেন, চার মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে সোমবার থেকে এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ছয় দিনের বেশি সময় ধরে পুরো পরিবার পানিবন্দি ছিলেন। এর মধ্যে তাদের শিশুটি এলার্জি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স হাসিনা বেগম বলেন, হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬০ জন রোগীর অধিকাংশই বন্যাকবলিত এলাকা থেকে আসা। রাত হলেই রোগীদের চাপ বাড়তে থাকে। ভর্তিদের অধিকাংশ ডায়রিয়া আক্রান্ত। যার মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন অর্ধশতাধিক রোগী।
বহির্বিভাগের চিকিৎসক সামছুল ইসলাম রানা জানান, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়াসহ পানি প্রবাহিত রোগীদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
চৌদ্দগ্রাম করপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হোসনা আক্তার বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করার সময় দেখেছি, বন্যাকবলিত এলাকার পানি ময়লা। এখন আমার এলার্জি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ডাক্তার বলেছে, বন্যার পানিতে নামার কারণে এ সমস্যা হয়েছে।
উপজেলার রাজাপুর আশ্রয়কেন্দ্র ক্যাম্পের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা বন্যার শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া, চর্ম ও শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি হচ্ছে। পুরুষ, মহিলার তুলনায় শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দিন যত যাবে, রোগীদের সংখ্যা তত বাড়তে পারে।
ওষুধ সঙ্কট সম্পর্কে তিনি বলেন, বন্যায় পুরো হাসপাতালটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টোর রুমে যত ওষুধ ছিল সব পানিতে নষ্ট হয়েছে। যার কারণে ওষুধ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।