Published : 01 May 2025, 09:20 AM
শরীয়তপুর পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতের ২০ বছরেও তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না পৌরবাসী। নেই পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও। অধিকাংশ এলাকায় নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক সড়কবাতি।
সড়কগুলো অন্ধকারে ডুবে থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। পাশাপাশি পৌর এলাকায় বেড়েছে মাদক সেবীদের দৌরাত্ম্য।
শরীয়তপুর পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিংকি সাহা বলছেন, শুধু সড়কবাতি নয়, পৌরসভায় অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। তবে পৌরসভায় নতুন করে ২০০টি স্ট্রিট লাইট বসানোর কাজ চলছে।
পৌরবাসীর অভিযোগ, ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও এ নিয়ে কারো যেন কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। পৌরসভার হিসেবে অর্ধেকের বেশি সড়কবাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। রাতে চলাচলে সড়কের পাশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামনে স্থাপিত লাইটের আলোতে নির্ভর করতে হয়।
তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতে। সড়কবাতি না থাকায় অনেক এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। চলাচলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘটছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মত ঘটনা।
এসব বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকে দায়ী করেছেন পৌরবাসী।
১৯৮৫ সালে শরীয়তপুর পৌরসভার যাত্রা শুরু। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার আয়তন ২৪ দশমিক ৭৫ বর্গকিলোমিটার; যার জনসংখ্যা ৫৫ হাজারের বেশি। পৌরসভাটি ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় ও ২০০৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়।
পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান শহর ও আবাসিক এলাকাগুলোতে সড়কবাতি কিছুটা দেখা গেলেও পাড়া ও মহল্লার অধিকাংশ সড়কে তা চোখে পড়েনি। পাশাপাশি সড়কগুলো অন্ধকারে ডুবে থাকায় মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে কলেজ রোড়, ধানুকা, পালংস্কুল রোড় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ পৌরবাসীর।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বালুচড়া এলাকার হারুন বেপারী বলেন, তার এলাকায় ছয় থেকে সাত বছর আগে সড়কের পাশে কিছু ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। ল্যাম্পপোস্টে বাতি লাগানোর এক থেকে দেড় বছরের মাথায় প্রায় সব বাতি নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হয় তাদের। অথচ শহরের অন্য বাসিন্দাদের মতো তাদেরকেও কর দিতে হচ্ছে।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিল্লাল খান বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে তাদের মহল্লার সড়কগুলোতে বাতি জ্বলছে না। সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। সড়কবাতি না থাকার কারণে এলাকায় মাদকসেবীসহ চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে।
বটতলা মোড়ের ফল বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। কিছু কিছু ব্যবসায়ী নিরাপত্তার জন্য দোকানের সামনে বাতি জ্বালিয়ে রাখেন।
পৌরসভার চৌরঙ্গীর মোড়, বটতলা, ডাক অফিস রোড়, নিরালা আবাসিক এলাকায় অন্তত দুই হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পথচারীদের চলাচলে গভীর রাত পর্যন্ত এসব এলাকা সরগরম থাকে। তবে এসব এলাকার অধিকাংশ সড়কেই বাতি জ্বলে না। সড়কের পাশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আলোতে পথচারীদের চলাচল করতে হয়।
পৌরসভার ঋনপাড়া এলাকার বিশু নাথ বলেন, রাত হলে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে প্রতিরাতে চুরি-ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন নিরব।
পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ ঘটলে অনেক সময় বাতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় ইট ছুঁড়ে বাতিগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়। কেউ আবার চুরি করে নিয়ে যায়।
লাইট পোস্টে বাতি নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো সংস্কার করা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলে জানান তিনি।
পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক পিংকি সাহা বলেন, নতুন ২০০টি স্ট্রিট লাইট বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। পৌরসভার বাজেট অনুযায়ী কাজ করা চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পৌরসভার ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।