কুয়াকাটায় আসার পথে বেহাল পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে দুর্ভোগে কিছুটা হতাশ হয়েছেন অবকাশ যাপন করতে আসা এই পর্যটকরা।
Published : 11 Oct 2024, 09:45 PM
দীর্ঘ দিন পর পর্যটকদের পদচারণায় প্রাণ ফিরেছে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা শেষে শারদীয়া দুর্গা পূজার লম্বা ছুটিতে শুক্রবার কুয়াকাটা সৈকতের বালিয়াড়িতে নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে আনন্দে মেতেছেন হাজারো পর্যটক।
একইসঙ্গে বাড়তি পর্যটকের উপস্থিতি ও বেচাকেনা ভালো হওয়ায় উচ্ছ্বসিত হোটেল-মোটেল মালিকসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও।
তবে কুয়াকাটায় আসার পথে বেহাল পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে দুর্ভোগে কিছুটা হতাশ হয়েছেন অবকাশ যাপন করতে আসা এই পর্যটকরা। কিন্তু ‘সাগরকন্যা’ কুয়াকাটার অপরূপ সৌন্দর্যে তাদের সে কষ্ট মিলিয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
সাগরে নামার পাশাপাশি পর্যটকরা সৈকতে ঘুরছেন ঘোড়া, মোটরসাইকেল কিংবা ওয়াটার বাইকে। অনেকে আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
নড়াইল থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রুমানা ইসলাম বলেন, “আমি এবারই প্রথম ঘুরতে আসলাম কুয়াকাটায়। এখানকার প্রকৃতি বেশ উপভোগ করার মত।
“দীর্ঘ সৈকতে দাঁড়িয়ে সাগরের বিশালতায় প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সবই ভাল কিন্তু কুয়াকাটা সৈকত আর একটু গোছানো থাকলে ভাল হয়।”
যশোর থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, “সাগরের উত্তাল ঢেউ, চিক চিক করা বালুকণা, মন ভোলানো প্রাকৃতিক দৃশ্য- আসলেই কুয়াকাটা সৈকতের তুলনা হয় না। পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসলাম। বেশ আনন্দ করছি।”
খুলনা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক হেলাল উদ্দিন বলেন, “এখানের সব কিছুই মোটামুটি। এর আগেও এসেছি কুয়াকাটায়, বেড়াতে ভালোই লেগেছে। কিন্তু এবার আসার সময় দেখলাম প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এ কারণে কিছুটা হতাশ।”
এদিকে দীর্ঘ ৯ মাস পর পূজার ছুটিতে পর্যটকের ভিড়ে রোববার পর্যন্ত কুয়াকাটা নগরীর হোটেল-মোটেল প্রায় শতভাগ বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছে কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “টানা ছুটিতে পর্যটকরা বেড়াতে এসেছেন। যেহেতু সামনে মৌসুম তাই এখন থেকেই পর্যটক সমাগম হবে। কুয়াকাটায় অন্তত দুই শত হোটেল-মোটেল রয়েছে। রোববার পর্যন্ত সেগুলোয় প্রায় শতভাগ বুকিং আছে।”
সব মিলিয়ে হাজারো পর্যটকদের মিলন মেলায় খুশি সব ধরনের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। খাবার হোটেল, রাখাইন মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট, মিস্ত্রিপাড়া পল্লিতে উপচে পড়া ক্রেতা হওয়ায় বিকিকিনি করতে পেরে খুশি দোকানিরা।
জয় রেস্টুরেন্টের মালিক গণেশ দাস বলেন, “দীর্ঘ দিন পর পূজার ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটন এসেছেন কুয়াকাটায়। বেচাকেনা খুব ভাল। পর্যটকদের চাপ সামলাতে হোটেল কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছে।”
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনের এসপি মো. আনসার উদ্দিন জানান, “এবারের পূজার ছুটিতে পর্যটকদের চাপ বেশি। তাই আমাদের সদস্যরাও বেশ তৎপর। টহল টিম বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন স্পটে কড়া নজরদারি রয়েছে। সাদা পোশাকেও সদস্যরা কাজ করছেন।”
এছাড়া পর্যটকদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতা আর সেবা দিয়ে যাচ্ছে ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও।
ট্যুর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটা। এখানে প্রতিদিন দেশ এমনকি বিদেশ থেকেও পর্যটক আসছেন বিনোদনের জন্য।
“পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে এবং বাড়বে। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা বাজার থেকে আলীপুর তিনমাথা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়ক কাদা-পানিতে একাকার হয়ে গেছে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “দেশের কোথাও মনে হয় এ রকম ভোগান্তির সড়ক নেই। পর্যটকরা বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। কুয়াকাটার বদনাম হচ্ছে।
“তবে প্রতিবাদ এবং তাগাদার কারণে আড়াই-তিন কিলোমিটার কাজ হয়েছে। আবার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত এই সড়ক মেরামত করলে আগামীতে পর্যটক আরও বাড়বে আশা করি।”
আরও পড়ুন