চনপাড়ায় ফের সংঘর্ষ, পথচারী গুলিবিদ্ধ

এ ছাড়া উভয়পক্ষের আরও দশজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 04:57 PM
Updated : 10 May 2023, 04:57 PM

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় আলোচিত চনপাড়ায় ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হন।

বুধবার দুপুরে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদক কারবারিদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয় বলে জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) আবির হোসেন জানান।

গুলিবিদ্ধ ৫৫ বছর বয়সী সৈয়দ খাঁ ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের দুই নম্বর গলির প্রয়াত হাশেম খাঁর ছেলে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর।

তার ছেলে জুলহাস খাঁ বলেন, তার বাবা ইটভাঙার কাজ করেন। কাজ থেকে ফেরার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালটির পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুর আড়াইটার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সৈয়দ নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার বুকের উপরের দিকে ঘাড়ের কাছাকাছি একটি গুলি লেগেছে।”

চনপাড়ার বাসিন্দারা বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাদক কারবারি জয়নাল আবেদীনের উপর হামলা চালায় অপর মাদক কারবারি সমসের আলী ও মো. সাহাবুদ্দিনের অনুসারীরা। এ ঘটনার জেরে বুধবার দুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জয়নালের পক্ষ নিয়ে আরেক মাদক কারবারি ইয়াসমিনের অনুসারীরাও সংঘর্ষে জড়ায়। উভয়পক্ষ থেকে গোলাগুলি চলে। এই সময় গুলিবিদ্ধ হন পথচারী সৈয়দ। এ ছাড়া আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের আরও দশজন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

খবর পেয়ে জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বিকালে আবির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। চনপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। এখন থেকে প্রতিদিন ৫০ জন পুলিশ সদস্য চনপাড়ায় মোতায়েন থাকবে। মাদক ও সন্ত্রাসী বাহিনীকে চনপাড়া থেকে নির্মূল করা হবে।”

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি জানান, সংঘর্ষের পর অভিযানে চনপাড়া থেকে মাদকসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্য অপরাধীদেরও শনাক্তের পর আইনের আওতায় আনা হবে।

জানতে চাইলে সমসের আলী বলেন, “আমি মাদকের মধ্যে নাই। জয়নাল ও ইয়াসমিন চনপাড়ায় মাদক ব্যবসা চালানোর জন্য এইসব কাজ করছে।”

পাল্টা অভিযোগ করে জয়নাল আবেদীন বলেন, “বজলু মেম্বার মারা যাওয়ার পর সমসের পুরো চনপাড়া নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। তার সঙ্গে আছে তার বন্ধু সাহাবউদ্দিন। গতরাতে তারা আমার বাড়িতে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।”

Also Read: সেই চনপাড়ায় ফের সংঘর্ষ, মাদক-অস্ত্রসহ আটক ১৩

চনপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, চনপাড়ার মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন। বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর পর আলোচনায় এলে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন বজলুর রহমান। হত্যা, মাদক ও ডাকাতিসহ অন্তত ২৬ মামলার এই আসামি কারাবন্দি অবস্থায় গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় মারা যান। বজলুরের মৃত্যুর পর চনপাড়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় তারই অনুসারীরা।এদের মধ্যে সমসের আলী ও সাহাবুদ্দিন গ্রুপের সঙ্গে জয়নাল আবেদীন গ্রুপের দ্বন্দ্ব পুরোনো। গত একমাসে চনপাড়ায় এই দুই গ্রুপের মধ্যে তিনটি বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ১১ এপ্রিল এক সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এরপর ৩০ এপ্রিল রাতভর সংঘর্ষ চলে তাদের মধ্যে পরদিন সকালে ওই এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদকসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে অধরা থেকে যায় বাহিনীর হোতারা। বুধবার তারা পুনরায় সংঘর্ষে জড়ায়।

স্থানীয়রা বলছেন, বজলুর রহমান মারা যাওয়ার পর ইউপি সদস্যের পদটি শূন্য হয়েছে। এই পদে নির্বাচন করার জন্য আগ্রহী সমসের আলী। তবে জয়নাল আবেদীনও নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এ কারণে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে।