সিলেট বিএনপির নেতাদের ঢাকায় বৈঠক, ২৫ ‘প্রার্থীর’ নাম কেন্দ্রে

“যত বড় নেতা হোন না কেন; কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে।”

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2023, 04:55 PM
Updated : 12 May 2023, 04:55 PM

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের কোনো নেতা যাতে প্রার্থী না হন এবং নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করেন সে ব্যাপারে ‘কড়া বার্তা’ দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। 

বুধবার ঢাকায় সিলেট মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ভার্চুয়াল সভায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়। 

সভা শেষে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে পারেন বা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির এমন ২৫ নেতার নাম কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছে দলের মহানগর কমিটি; যেন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, “সিটি নির্বাচনে কোনো নেতাকর্মী যাতে অংশগ্রহণ না করে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

“২৫ নেতার নামের একটি প্রাথমিক তালিকা কেন্দ্রীয় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছেও পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

নামের তালিকাটি ছোট বা বড়ও হতে পারে বলে জানান বিএনপির এ নেতা। 

তালিকায় থাকা ২৫ নেতার মধ্যে আটজনই বর্তমান কাউন্সিলর। চারজন সাবেক কাউন্সিলর। বাকিরা আগে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন বা প্রথমবারের মত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব উপস্থিত ছিলেন। 

পরে রাত ৯টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিলেটের নেতারা। এ সময় মহানগর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরও উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সারাদেশে বিএনপির কেউ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এটাই আমাদের বিশ্বাস। দল থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” 

তবে সিলেট মহানগরে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক ২৫ নেতাকর্মীর নাম কেন্দ্রে জমা দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা। 

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, সিলেটজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির’ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে সভায়। চলমান ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনকে’ দমিয়ে রাখতেই নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে মতামত প্রকাশ করেন সবাই। 

‘গণতন্ত্রের বিজয়’ নিশ্চিত করতে সিলেট মহানগর বিএনপিকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয় সভায়। গ্রেপ্তার নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর রাখা, তাদের পাশে থাকা এবং তাদের আইনি সহায়তার বিষয়টিও উঠে আসে নেতাদের কথায়। 

বৈঠকে মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডসহ নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারেও জোর দেওয়ার কথা বলা হয়। 

যাদের নাম কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আটজন কাউন্সিলর; তারা হলেন- নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রেজাউল হাসান লোদী (কয়েস লোদী), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফরহাদ চৌধুরী শামীম (তিনি মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীও ছিলেন), ১ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রকিবুল ইসলাম ঝলক, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুর রকিব তুহিন এবং সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা দলের আহ্বায়ক রোকসানা বেগম। 

তালিকায় থাকা চারজন সাবেক কাউন্সিলর হলেন- নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম আহমদ (রনি), ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ মিছবা উদ্দিন, সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি সালেহা কবির সেফি এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু।

সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন- নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা গোলাম মোন্তফা কামাল, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা যুবদলের সাবেক নেতা সুমন সিকদার ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বজলুর রহমান, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদলের সাবেক নেতা আবদুল হাসিব, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক উসমান হারুন পনির, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে দিলওয়ার হোসেন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদল নেতা দিলওয়ার হোসেন ও বিএনপি নেতা গৌস উদ্দিন, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে যুবদল নেতা কামাল আহমদ ও বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি মামুনুর রহমান এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. আমীর হোসেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সৈয়দ তৌফিকুল হাদী বলেন, “আমি দুই বারের কাউন্সিলর হওয়াতে নেতাকর্মীদের চাপে এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” 

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, “এখন এ বিষয়ে কথা বলার সময় না। নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা ফরম তুললে আপনাদের জানানো হবে।”

কেন্দ্রে নামের তালিকা জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।” 

কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের পাঁচ সিটি নিবার্চনে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মী অংশ নিতে পারবেন না জানিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “এ বিষয়টি আমাদের কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। 

“এ সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। যত বড় নেতা হোন না কেন; কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে।” 

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। ভোট হবে ২১ জুন। 

এর আগে ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। 

আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে চতুর্থবারের মতো ভোট হবে। বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী এখনও নির্বাচনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তিনি ২০ মে প্রার্থিতার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২৩ মে এই সিটিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হবে। 

নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে; এরই মধ্যে দলের ১৭ নেতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আনুষ্ঠানিকভাবে এই সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণার মধ্যে দলটির নেতাদের অভিযোগ, হয়রানি করার জন্যই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আতঙ্কে এখন নেতাকর্মীরা বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না।

৩৮৬ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ 

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত মেয়র পদে পাঁচজন ও কাউন্সিলর পদে ৩৮১ জন নারী-পুরুষ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের মিডিয়া সেল (সিটি-নির্বাচন) কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন জানান। 

তিনি বলেন, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে দুজন দলীয়ভাবে ও তিনজন স্বতন্ত্র হিসেবে কিনেছেন মনোনয়ন। 

মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম নেওয়া পাঁচজন হলেন- মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা), মোহাম্মদ আবদুল হানিফ ওরফে কুটু (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান (স্বতন্ত্র) ও সামছুন নুর তালুকদার। 

কাউন্সিলর পদে ৩৮১ জনের মধ্যে ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর) ৮১ জন এবং ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ডে (পুরুষ কাউন্সিলর) ৩০০ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। 

এখন পর্যন্ত মহিলা কাউন্সিলর (সংরক্ষিত) পদে- ১ নং ওয়ার্ডে দুজন, ২ নং ওয়ার্ডে চারজন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছয়জন, ৪ নং ওয়ার্ডে আটজন, ৫ নং ওয়ার্ডে চারজন, ৬ নং ওয়ার্ডে তিনজন, ৭ নং ওয়ার্ডে দুজন, ৮ নং ওয়ার্ডে চারজন, ৯ নং ওয়ার্ডে চারজন, ১০ নং ওয়ার্ডে আটজন, ১১ নং ওয়ার্ডে নয় জন, ১২ নং ওয়ার্ডে নয় জন, ১৩ নং ওয়ার্ডে ১৩ জন ও ১৪ নং ওয়ার্ডে পাঁচজন কিনেছেন মনোনয়ন ফরম। 

পুরুষ কাউন্সিলর (সাধারণ) পদে- ১ নং ওয়ার্ডে চারজন, ২ নং ওয়ার্ডে দুজন, ৩ নং ওয়ার্ডে তিনজন, ৪ নং ওয়ার্ডে দুজন, ৫ নং ওয়ার্ডে ছয়জন, ৬ নং ওয়ার্ডে চারজন, ৭ নং ওয়ার্ডে চারজন, ৮ নং ওয়ার্ডে ১১ জন, ৯ নং ওয়ার্ডে ছয়জন, ১০ নং ওয়ার্ডে ছয়জন, ১১ নং ওয়ার্ডে ছয়জন, ১২ নং ওয়ার্ডে দুজন ও ১৩ নং ওয়ার্ডে সাত জন, ১৪ নং ওয়ার্ডে দুজন, ১৫ নং ওয়ার্ডে সাতজন, ১৬ নং ওয়ার্ডে পাঁচজন, ১৭ নং ওয়ার্ডে তিনজন, ১৮ নং ওয়ার্ডে সাতজন, ১৯ নং ওয়ার্ডে চারজন, ২০ নং ওয়ার্ডে দুজন, ২১ নং ওয়ার্ডে চারজন, ২২ নং ওয়ার্ডে নয়জন, ২৩ নং ওয়ার্ডে তিনজন, ২৪ নং ওয়ার্ডে আটজন, ২৫ নং ওয়ার্ডে চারজন, ২৬ নং ওয়ার্ডে তিনজন, ২৭ নং ওয়ার্ডে নয়জন, ২৮ নং ওয়ার্ডে নয়জন, ২৯ নং ওয়ার্ডে ১৫ জন, ৩০ নং ওয়ার্ডে ১৯ জন, ৩১ নং ওয়ার্ডে নয়জন, ৩২ নং ওয়ার্ডে ১০ জন, ৩৩ নং ওয়ার্ডে ১৬ জন, ৩৪ নং ওয়ার্ডে ১৮ জন, ৩৫ নং ওয়ার্ডে চারজন, ৩৬ নং ওয়ার্ডে আটজন, ৩৭ নং ওয়ার্ডে ১৪ জন, ৩৮ নং ওয়ার্ডে ১০ জন, ৩৯ নং ওয়ার্ডে নয়জন, ৪০ নং ওয়ার্ডে সাত জন, ৪১ নং ওয়ার্ডে সাতজন এবং ৪২ নং ওয়ার্ডে ১২ জন।