মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ছিলেন অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী এবং একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
Published : 21 Jul 2023, 05:35 PM
বুকে ব্যথা অনুভব করায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মোহাম্মাদ মহিউদ্দিনকে।
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেল থেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন বলেন, “শুক্রবার সকালে বুকে ব্যথা অনুভব ও হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে মহিউদ্দিনকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
এই আসামির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, “মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। এরপর তাকে হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
“সেখানে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তাকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নিরাপত্তা হেফজেতে তার চিকিৎসা চলছে।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির একজন মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। অধ্যাপক তাহেরের এই সহকর্মী ছিলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামি হলেন অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পশ্চিমপাড়া আবাসিক কোয়ার্টার থেকে অধ্যাপক তাহের নিখোঁজ হন। পরদিন বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের গলিত মরদেহউদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
অধ্যাপক তাহের হত্যা: ফাঁসির আসামি জাহাঙ্গীরের আবেদন খারিজ
অধ্যাপক তাহেরের করা একটি জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাবির ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন আদালতে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, অধ্যাপক ড. এস তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গবেষণা জালিয়াতির কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন হত্যার পরিকল্পনা করেন। বালিশ চাপা দিয়ে খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের লাশ বাসার পেছনে নেওয়া হয়। লাশ গুমের জন্য জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে তাহেরের লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেয়।
দণ্ডিত অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও তার স্ত্রীর ভাই সালাম। তবে ছাত্রশিবিরের নেতা সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সি বিচারে খালাস পান।
পরে দণ্ডিতরা হাই কোর্টে আপিল করেন। হাই কোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
পরে তাদের দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাই কোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখে।
এরপর আসামিদের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট। এরপর বাকি থাকে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন।
কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন আসামিরা। সে আবেদনও নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। গত ৫ জুলাই সেই চিঠি রাজশাহী কারাগারে পৌঁছায়।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তাদের ফাঁসি কার্যকরের আগের সব ধাপ শেষ হওয়ার পর জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাব হোসেন গত ১১ জুলাই একটি রিট আবেদন করেন, যেখানে বলা হয়, রাজশাহীর মতিহার থানায় মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক রাখা হয়েছিল; যা সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধির লংঘন।
এই রিট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের সাজার ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিল আবেদনে।
বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার বেঞ্চ গত ১৭ জুলাই এই রিট আবেদন খারিজ করে দেয়।
পরে রিট আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) লিভ টু আপিল করা হয়। ২৩ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।