Published : 30 Apr 2025, 09:18 PM
বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে শহরের পৌর পার্কে টিটু মিলনায়তনের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দিন।
তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
এদিন বিকালে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের’ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে এনসিপি।
অন্যদিকে এই আয়োজনের বিরোধিতা করে একই স্থানে পাল্টা প্রতিবাদ কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিকাল ৫টার দিকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্যসচিব তাহসিন রিয়াজসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উঠেন। সমাবেশ শুরু হলে কিছুক্ষণ পর একদল শিক্ষার্থী ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন।
এ সময় এনসিপির নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে প্রথমে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এরপর তাদের মধ্যে তিন দফা মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এমনকি সারজিস আলম বক্তব্য দেওয়ার সময়ও তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে।
এনসিপি বগুড়া জেলা সংগঠন আহাম্মেদ সাব্বির বলেন, সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত এক নেতার নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয়জন সভাস্থলে প্রবেশ করে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তাদের সভা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, “বগুড়ায় জামায়াত এবং আওয়ামী দোসরদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা রক্ত দেওয়া সংগঠন। তাই প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে শ্লোগান দিয়ে জবাব চাওয়া হয়েছিল সার্জিস আলমের কাছে।
“শ্লোগান দেওয়া হয়েছিল, “জামাত-আওয়ামী দোসর কেন এনসিপিতে, সার্জিস তুই জবাব দে।”
এ বিষয় নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ায়।
ওসি মঈনুদ্দিন বলেন, “সমাবেশ চলাকালে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি গ্রুপ সেখানে প্রবেশ করে সার্জিস আলমের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় দুই পক্ষের মাঝে হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।”
সমাবেশে সারজিস আলম বলেন, “আওয়ামী লীগ এই দেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিহত করা হবে। বগুড়া থেকেই প্রতিরোধের সূচনা হবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত ১৬ বছরে বগুড়া সবদিক থেকে বঞ্চিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চাকরি, প্রমোশন, অবকাঠামো সবখানেই বৈষম্য করা হয়েছে। বগুড়ার বিমানবন্দর সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি।
“আধুনিক হাসপাতালকে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম থাকলেও কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা হয় নাই।”
এ সময় ঢাকা থেকে বগুড়ায় সরাসরি রেললাইন চালুর দাবি জানান এনসিপির মুখ্য সংগঠক।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক যুথী অরণ্য প্রীতি। এতে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব তাহসিন রিয়াজ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাকিব মাহদী, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম পলক, আবদুল্লাহ আল মুহিন, নাজমুল হক, জেলা সংগঠক আহমেদ সাব্বির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা সদস্যসচিব সাকিব খান, ওয়ারিয়র্স জুলাইয়ের আহ্বায়ক মো. মুশফিক, শহীদ সেলিম মাস্টারের ভাই উজ্জ্বল হোসেন এবং শহীদ রাতুলের ভাই হামজা বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে সারজিস আলমের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সাতমাথার মুক্তমঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয়।