অধ্যক্ষ লাঞ্ছিতের প্রতিবেদনের পর নড়াইল সদরের ওসি প্রত্যাহার

নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে; তিনি মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন।

নড়াইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2022, 08:32 AM
Updated : 3 July 2022, 08:32 AM

শনিবার রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার সময় ওসি শওকতও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

রাতেই খুলনা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয় থেকে ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয় বলে নড়াইল জেলার পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানান।

সোমবার সকালে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার রাতেই শওকত কবীরকে সদর থানা থেকে খুলনায় রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।”

“থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমানকে ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

তবে কী কারণে ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়ে হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি পুলিশ সুপার।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন।

এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশে খবর দেন। এরই মধ্যে ‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাধে।

সে সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা স্বপন কুমারের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। তখন পুলিশ ওই ছাত্রের সঙ্গে অধ্যক্ষকেও থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়; দেশব্যাপী প্রতিবাদ জানায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

জুতার মালা পরানো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, যারা এটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ২৫ জুন বলেছিলেন, “জুতার মালা পরানোর কোনো ঘটনা আমি দেখিনি। সেরকম কিছু আমার জানা নেই।”

এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির প্রধান ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী। অন্য দুই সদস্য হলেন- মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সায়েদুর রহমান ও সদর থানার ওসি শওকত কবীর।

শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়।

এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের বলেন, “আমরা ভিডিও ফুটেজ, এলাকার জনসাধারণের বক্তব্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছি।”

তবে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন কমিটির প্রধান।

আরও পড়ুন: