বুধবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৯ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৫১ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন তিনি।
জম্পি মিষ্টিকুমড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৯৮ ভোট; তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. কাউসার ট্রাক্টর প্রতীকে পান ৬৪৭ ভোট।
জম্পির এই জনপ্রিয়তা তিন দশকের বেশি সময়ের। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটি নির্বাচনে সাতবার প্রার্থী হয়েছেন, জয়ী হয়েছেন প্রতিবারই।
২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২০১২ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। এবার জম্পি ছাড়াও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চারজন প্রার্থী ছিলেন। তারা ব্যানার-পোস্টার এবং মাইকিংয়ে মাঠ গরম রাখলেও ভোটের প্রচারে ‘পোস্টার-ব্যানারেই সীমাবদ্ধ’ ছিলেন বলে জানান জম্পি।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদকের পদে থাকা জম্পি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জম্পি বলেন, তার চাচা আবদুর রশিদ ১৯৮৫ সালে কুমিল্লা পৌরসভার কমিশনারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মারা যান। এরপর তিনি কমিশনার পদে উপনির্বাচনে জয়ী হন। ১৯৮৯, ১৯৯৩, ২০০০ সালেও বিজয়ী হন। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২০১২ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হন।
প্রথম ভোটে প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বললেন, “আমার বয়স তখন ২২ বছর। কিন্তু বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ২৫ বছরের নিচে প্রার্থী হওয়া যায় না। এখন এলাকার মানুষই আদালতে গিয়ে আমার বয়স সংশোধন করে ২৫ বছর বানিয়ে আনে।
“এরপর তারাই আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে। সেসময় পুরো দেশের মধ্যে আমি ছিলাম ‘সবচেয়ে কম বয়সী’ কমিশনার। সেই যে মানুষের সেবা করা শুরু, এখনও তা চলছেই।”
জম্পির ভাষ্য, “আমার চাচা এই ওয়ার্ডে ৩৩ বছর কমিশনার ছিলেন। তার অনুসারী হিসেবে আমিও ৩৭ বছর পার করছি। আমার ওয়ার্ডের জনগণের কাছে আমি সব সময় কৃতজ্ঞ।
“তারা কখনও আমাকে ভোটের মাঠ থেকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি। আমি সব সময় চেষ্টা করি জনগণকে সঠিক নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে।”
৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাগিচাগাঁও এলাকার ভোটার খন্দকার আবু তাহের বলেন, “মানুষের কোনো বিপদ হলেই সবার আগে এগিয়ে যান জম্পি। মানুষ সুখে-দুঃখে সব সময় তাকে পাশে পায়। এজন্য তাকে বারবার নির্বাচিত করে। এবারও ভোটাররা জম্পির উপরই আস্থা রেখেছেন।”
জম্পি বলেন, “এবারও এলাকাবাসীর অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি, আমার কোনো মাইকিং হয়নি নির্বাচনে। কারণ মাইকিংয়ে মানুষ বিরক্ত হয়। এলাকাবাসী আমার জন্য নির্বাচনের সব কাজ করছেন। তারাই আমাকে সপ্তমবার নির্বাচিত করেছেন।”
কাউন্সিলর হিসাবে নিজের এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা, নালা ও সড়কে এখনও বেশ কিছু সমস্যা আছে। এবার এই কাজগুলো শেষ করতে চাই। আমি চাই, ৯ নম্বর ওয়ার্ড হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মডেল ওয়ার্ড।”
বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তৃতীয়বারের মতো ভোট দিয়ে নিজেদের জনপ্রতিনিধি বেছে নেয় কুমিল্লাবাসী। নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১০৬ জন প্রার্থী।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সাধারণ ওয়ার্ডে কোনো নারী কাউন্সিলর পায়নি কুমিল্লা নগরবাসী। এবার তিনজন ভোটের মাঠে নামলেও জয় পাননি কেউ।
নগরী ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রোকসানা আক্তার, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে রুনা বেগম এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাহিদা আক্তার এবার কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।
এর আগে ২০১৭ সালের নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রথমবারের মত নির্বাচন করে হেরে যান কহিনুর আক্তার কাকলি।
এবারের প্রার্থী রুনা বেগম ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের স্ত্রী। তিনি আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী হানিফ মাহমুদের কাছে হেরেছেন।
আর ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি রোকসানা আক্তার। অপরদিকে ২ নম্বর ওয়ার্ডে স্বামী মো. বিল্লালের ‘ডামি প্রার্থী’ ছিলেন তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার।
আরও খবর: