শারীরিক প্রতিবন্ধী এ শিক্ষার্থীর সঙ্গে সোমবার ফোনে চার মিনিট কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার খোঁজখবর নেন এবং যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তামান্না নুরা জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে তার মোবাইল ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে কল করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে তামান্নার ফোন বন্ধ পেয়ে তাকে একটি বার্তা পাঠান বলে জানান তামান্নার বাবা রওশন আলি।
তামান্না নুরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার চিঠি পেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে কল দিয়েছিলেন। এইচএসসির ফলাফল শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘তুমি এগিয়ে যাও, আমি তোমার সাথে আছি। আমি তোমাকে যাবতীয় সহযোগিতা করব।তোমার সাফল্যে আমি আনন্দিত।"
তামান্না জানান, গত ২৪ জানুয়ারি নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়ে এবং তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিঠি লেখেন। তামান্নার বাম পায়ে লেখা সে চিঠি তার বাবা ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হকের কাছে জমা দেন। সে চিঠি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান ইউএনও।
“প্রধানমন্ত্রী আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে 'বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে' একটি আবেদন করতে বলেছেন,” বলেন তামান্না।
তামান্না প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী – পিইসি, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট – জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। দৃঢ় মনোবল নিয়ে তামান্না বাম পা দিয়ে লিখে এই ফল করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
এসএসসি ও এইচএসসি পাশের পর বিডনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে তামান্নাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
যশোরের ঝিকরগাছার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী তামান্না নুরা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভিন শিল্পী দম্পতির মেয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তামান্না বড়।
জন্ম থকে দুই হাত ও এক পা নেই তামান্না নুরার। টেবিলের ওপর বসে এক পা দিয়ে খাতায় লেখেন তামান্না। তার সে লেখাও দৃষ্টিনন্দন। শুধু বাম পা নিয়ে জন্ম নেওয়া তামান্না শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছেন। তার এখন শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
ঝিকরগাছার ইউএনও মো. মাহবুবুল হক বলেন, তামান্না প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। তিনি সেটি পেয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি তামান্নাকে ফোন করেন। প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানাও তামান্নার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তামান্নাকে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছেন। পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পর আমরা ভাষা হারিয়ে ফেলি। আমার সন্তানের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন – এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হতে পারে!“
তিনি বলেন, “বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা লন্ডন থেকে তামান্না নুরার সাথে ফোনে কথা বলেন। তিনিও তামান্নাকে আশ্বস্ত করেন, এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখান।”