পায়ে লিখে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেলেন তামান্না

দুই হাত ও এক পা নেই যশোরের তামান্না নুরার, যিনি উচ্চ মাধ্যমিকেও আগের সাফল্য ধরে রেখে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

যশোর ও বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2022, 06:29 PM
Updated : 13 Feb 2022, 06:29 PM

বিজ্ঞানের এই ছাত্রী প্রাথমিক সমাপনী (পিইস), জেএসসি এবং এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন বলে তার বাবা রওশন আলী জানান।

রোববার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তামান্না যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন বাঁকড়া কেন্দ্রে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন।

তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পীর বড় মেয়ে।

ফলাফলে আনন্দ প্রকাশ করে তামান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে বিসিএস ক্যাডার হওয়া। স্বপ্নকে জয় করতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।

তার বাবা রওশন আলী স্থানীয় ছোট পোদাউলিয়া দাখিল মাদ্রাসার (নন এমপিও) বিএসসি শিক্ষক এবং মা গৃহিণী।

তামান্না এসএসসি পাশ করার পর তার বাবা ও মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।

সেদিন তার মা খাদিজা পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জন্ম থেকেই ওর দুটি হাত ও একটি পা নেই। কিন্তু তামান্না প্রায় সব কাজ নিজে করতে পারে। পা দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। সাজগোজ, চুল আঁচড়ানো, বইয়ের পাতা ওল্টানো, ছবি আঁকা, রুলার দিয়ে খাতায় দাগ কাটা, লেখার কাজ — সবই করতে পারে। পা দিয়ে করাটা ওর অভ্যাস হয়ে গেছে।

ছোটবেলা পড়ার প্রতি তামান্নার প্রবল আগ্রহ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি ভাবলাম পড়ায় ভালো হলে কেন লিখতে পারবে না। তাই পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম আটকে দিয়ে লেখার তালিম দিই। কয়েক দিনের মধ্যেই সে সুন্দর লিখতে শিখে যায়।”

তামান্নাকে প্রথমে কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করাতে চায়নি জানিয়ে তিনি সেদিনের কথা স্মরণ করেন।

ওই সময় খাদিজা বলেন, “অবশেষে আমার স্বামীর অনুরোধে বাঁকড়ার বেসরকারি আজমাইন এডাস স্কুলের শিক্ষক রুবিনা আক্তার তার ভর্তির ব্যবস্থা করেন।”

রুবিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তামান্না অত্যন্ত মেধাবী মেয়ে। তার স্মরণশক্তি প্রখর। স্কুলে ভর্তির পর সে লেখাপড়ায় ক্লাসের সবাইকে টপকে যায়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠে।”

এই স্কুল থেকে ২০১৩ সালে পিইসি এবং পরে জেএসসি পরীক্ষায়ও তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তামান্না বড়। তার ছোট বোন মমতাহেনা রশ্মী তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর ভাই মহিবুল্লার বয়স চার বছর।