জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার আলিপুর গ্রামের রওশন আলীর বড় মেয়ে তামান্না এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পাবেন বলে আশা করছেন তার শিক্ষকরা।
তামান্না মুখ ও পা দিয়ে জ্যামিতি ও বিজ্ঞানের চিত্র আঁকার পাশাপাশি ‘খুব ভাল’ ছবিও আঁকতে পারেন। তার ছবি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছে ।
তামান্নার মা খাদিজা পারভিন শিল্পী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জন্ম থেকেই ওর দুটি হাত ও একটি পা নেই। কিন্তু তামান্না প্রায় সব কাজ নিজে করতে পারে।
“পা দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। সাজগোজ, চুল আঁচড়ানো, বইয়ের পাতা ওল্টানো, ছবি আঁকা, রুলার দিয়ে খাতায় দাগ কাটা, লেখার কাজ—সবই করতে পারে। পা দিয়ে করাটা ওর অভ্যাস হয়ে গেছে।”
ছোটবেলা পড়ার প্রতি তামান্নার প্রবল আগ্রহ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি ভাবলাম পড়ায় ভালো হলে কেন লিখতে পারবে না। তাই পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম আটকে দিয়ে লেখার তালিম দিই। কয়েক দিনের মধ্যেই সে সুন্দর লিখতে শিখে যায়।”
তামান্নাকে প্রথমে কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করাতে চায়নি জানিয়ে তিনি সেদিনের কথা স্মরণ করেন।
“অবশেষে আমার স্বামীর অনুরোধে বাঁকড়ার বেসরকারি আজমাইন এডাস স্কুলের শিক্ষক রুবিনা আক্তার তার ভর্তির ব্যবস্থা করেন।”
এই স্কুল থেকে ২০১৩ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) তামান্না জিপিএ-৫ পায়। তারপর জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়ও সে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষাতেও তামান্না জিপিএ-৫ পাবে বলে আশা করছেন বাঁকড়া জে কে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল খান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিজ্ঞানের ছাত্রী তামান্না পড়াশোনায় অত্যান্ত ভাল। মুখ ও পা দিয়ে জ্যামিতি ও বিজ্ঞানের চিত্র আঁকার পাশাপাশি সে খুব ভাল ছবি আঁকতে পারে। তার আঁকা ছবি স্থানীয় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছে ।”
তামান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি পা দিয়ে আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি অনেক পথ পাড়ি দিতে চান।
“বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। প্রতিবন্ধীরা যে সমাজের বোঝা নয় তা প্রমাণ করার জন্য কাজ করতে চাই।”
তামান্নার বাবা রওশন আলী একজন মুদি দোকানি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবারকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। তাই মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে এসে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নিই।
তামান্না একটি হুইল চেয়ারে করে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় স্কুলে যাওয়া-আসা করেন। তার ক্লাসে বসার জন্য এক টেবিল রয়েছে।
দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তামান্না বড়। তার ছোট বোন মমতাহেনা রশ্মী তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে । আর ভাই মহিবুল্লার বয়স চার বছর।
রওশন আলী বলেন, তামান্না বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় ২০৯ নম্বর কক্ষে অন্য পরীক্ষার্থীদের পাশে একটি চৌকিতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে।