তিন ডিসির ‘মোবাইল সিম ক্লোন করে’ চাঁদা দাবি

নেত্রকোণা, মেহেরপুর ও যশোরের জেলা প্রশাসকের সরকারি মোবাইল নম্বরের সিম ‘ক্লোন’ করে চাঁদা দাবি ও প্রতারণার চেষ্টা হয়েছে।

যশোর প্রতিনিধিনেত্রকোণা প্রতিনিধি, মেহেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2022, 09:30 AM
Updated : 10 Feb 2022, 10:00 AM

এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পাশাপাশি ফেইসবুকে বার্তা দিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।

গত সোমবার সন্ধ্যার পর কাছাকাছি সময়ে তিন জেলা প্রশাসকের দাপ্তরিক মোবাইলের নম্বরের মত একই রকম নম্বর থেকে ফোন করে চাঁদা দাবি করা হয়।

বিষয়টি জানিয়ে গত মঙ্গলবার নেত্রকোণার জেলা প্রশাসনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে জরুরি সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, “জেলা প্রশাসক, নেত্রকোণার ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক মোবাইল নম্বর ক্লোন করে বিভ্রান্তিমূলকভাবে একটি প্রতারকচক্রের দ্বারা বিভিন্ন জনের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এই বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কোনোরূপ আলাপ না করার জন্যে সবাইকে সতর্ক করা হল।”

নেত্রকোণার ডিসি কাজি মো. আব্দুর রহমান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতারকরা মোবাইল নম্বর ক্লোন করার পর একজনের কাছে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্যে বলে। বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সুপারের কার্যালয়, বিটিআরসিকে জানানো হয়।

“তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে; যাতে কেউ এই প্রতারকদের খপ্পরে না পড়েন। পরে ক্লোনকারীদের কাছে থাকা ক্লোন সিমটি বন্ধ করা হয়। এখন আর সিমটি কার্যকর নেই।”

নেত্রকোণার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা প্রশাসকের মোবাইল নম্বর ক্লোন হওয়ার পর বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়। এরপর থেকে আমাদের পক্ষ থেকে ক্লোনকারী প্রতারকচক্র শনাক্ত করতে কাজ চলছে।”

“যে নম্বর থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা চাওয়া হয়েছিল সেই নম্বরের সূত্র ধরে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনও শনাক্ত করা যায়নি।”

তবে দ্রুতই এই প্রতারকচক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এসপি।

এভাবে যদি কোনো প্রতারক কারও কাছে টাকা চায়, তাহলে বিষয়টি পুলিশকে জানাতেও তিনি অনুরোধ করেছেন।

যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানও তার দাপ্তরিক মোবাইল নম্বর ‘ক্লোন’ হওয়ার কথা জানিয়ে সাধারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন।

তবে এখনও জিডি করেননি জানিয়ে তমিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই নম্বর থেকে কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে ফোন দেওয়া হয়েছিল। তবে কেউ প্রতারিত হননি। বা আর্থিক সুবিধা কেউ নিতে পারেননি। কিন্তু ক্লোন হইছে এটা সত্যি।”

তিনি বলেন, “বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। কয়েকটি নম্বরও দেওয়া হয়েছে; যেখান থেকে ফোন এসেছে। উনারাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। “

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজে একটি সতর্কমূলক বার্তা দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, “সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলা প্রশাসক যশোরের দাপ্তরিক মোবাইল নম্বর ক্লোনের মাধ্যমে একটি চক্র জেলার বেশ কয়েকজন ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফোন করছে।

“এ ক্ষেত্রে একটু খেয়াল করে দেখবেন, নম্বরটি +৬৮৮ ০১৭১৩৪১১৩৭১ এ রকমের অর্থাৎ ‘+৮৮’-এর আগে কোনো একটি সংখ্যা তারা ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হল এবং কোনোপ্রকার আর্থিক লেনদেন না করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হল।”

মেহেরপুরের ডিসি মুনসুর আলম খানের সরকারি মোবাইল নম্বর ‘ক্লোন’ করে চাঁদা দাবির ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির জহির উদ্দীন বাদী হয়ে জিডি করেছেন। 

সদর থানায় সোমবার রাতে দায়ের করা জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিটের সময় জেলা প্রশাসকের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে জেলা প্রশাসকের গাড়িচালক মোমিন হোসেনের নম্বরে ফোন করে দুই হাজার টাকা একটি নম্বরে বিকাশ করতে বলা হয়। গাড়িচালক কোনো কিছু না বুঝেই জেলা প্রশাসক ভেবে দুই হাজার টাকা দিয়ে দেন।

“এরপর তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত আরও কয়েকটি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে দুই হাজার টাকা দেওয়ার জন্য বলে। রাতে জেলা প্রশাসককে টাকা পেয়েছেন কিনা জানতে চান গাড়িচালক মোমিন হোসেন।

“জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান তাকে বলেন, ‘আমি তো তোমাকে টাকা পাঠাতে বলিনি।’”

জেলা প্রশাসক মনসুর আলম খান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।

মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহদারা খান দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তদন্ত শেষে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন।

পুরনো নিউজ