রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলের বিরোধিতার মধ্যে শুক্রবার গভীর রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ওই ভাস্কর্যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
পৌর কর্তৃপক্ষ পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে একটির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। শুক্রবার রাতের ওই হামলায় ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাঁ হাতের আংশিক ভেঙে ফেলা হয়।
স্থানীয় সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, রাত সোয়া ২টার পর টুপি মাথায় পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দুইজন পায়ে হেঁটে এসে বাঁশের মই বেয়ে উঠে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর করে।
এই ঘটনায় শহরতলীর জুগিয়া পশ্চিম পাড়ার ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার দুই শিক্ষক ও দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেছে পুলিশ।
এই ঘটনার পর শনিবার পৌর শহরে কিছু তরুণ মোটরসাইকেল নিয়ে অস্ত্র হাতে মহড়া দেয় এবং পাঁচ রাস্তার মোড় এলাকায় কয়েকজন যুবক গুলিবর্ষণ করে চলে গেছে।
জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা পরবর্তী সময়ে শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
সভায় কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, দুর্বৃত্তরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে কার্যত স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের উপর কামড় দিয়েছে। সেই ঘটনার জের ধরে প্রতিবাদের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশবেষ্টিত অবস্থায় কীভাবে কয়েকজন তরুণ মাইক্রোবাস নিয়ে এসে বীরদর্পে গুলি চালিয়ে চলে গেল?
“এটা আমাদের আরও একটা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
ঘটনাস্থল শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ের বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী নেতা এসএম কাদরী শাকিল বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে যেভাবে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলিবর্ষণ করে বীরদর্পে তারা চলে গেল তাতে পরিবার পরিজনসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন ও আতংকিত।
ঘটনাকে অন্যখাতে নেওয়ার জন্য কিছু অতি উৎসাহী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা, ভাংচুর চালিয়েছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ এসব অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।”
সভায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সদস্যসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
পুলিশের সংবাদ সম্মেলন
এই ঘটনার তদন্তের বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে রোববার বিকালে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসের সভাকক্ষে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার মহিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন।,
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “রাতের আঁধারে ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। ঘটনার শ্বাসরুদ্ধকর ২৩ ঘণ্টার চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং যাচাই-বাছাই করে ইতোমধ্যে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে চার জনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের কাছ থেকেই আমরা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করব কারা কীভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভুমিকা রেখেছে এই ভাস্কর্য ভাংচুরে। এটা নিছক কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আমরা দেখছি না।
“তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ শতভাগ পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে কাজ করবে যা কোনোভাবে পুলিশের ভুমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।”
তিনি বলেন, পুলিশ এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে এই ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে তারা। এক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্তে যেসব প্যারামিটার নিয়ে পুলিশ কাজ করে তার সবগুলি প্রয়োগ করেই তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে।
কীভাবে ধর্মীয় বয়ান শুনে এই জাতীয় কাজে উৎসাহিত হয় তার সূক্ষ বিশ্লেষণ করে এর মাত্রা নিরূপন করা হবে এবং সারা দেশেই এর আর কোনো বাস্তবতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে, বলেন মহিদ।
সংবাদ সম্মেলেন অন্যান্যের মধ্যে পুলিশের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি নহিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এম এম তানভির আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।