আইইডিসিআর দল সাদুল্লাপুরে, বন্ধের দাবি স্থানীয়দের

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে বিয়ের দাওয়াতে আসা দুই যুক্তরাষ্ট্রফেরতের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইইডিসিআরের একটি দল এলাকায় পৌঁছেছে।  

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2020, 06:01 PM
Updated : 23 March 2020, 06:01 PM

সিভিল সার্জন অফিস জানায়, দলের সদস্যরা ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকা যে ২৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এরপর বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত ১১ মার্চ সাদুল্লাপুরের একটি গ্রামের এক বাড়িতে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী দুইজন আত্মীয়। তারা ওই বাড়িতে দুদিন থেকে ১৩ মার্চ নিমন্ত্রণ খেয়ে গাইবান্ধা শহরে নিজেদের বাড়ি চলে যান। পরবর্তীতে বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে এলে তাদের দুইজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। পরে আইইডিসিআরের পরীক্ষায় ওই দুইজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

এদিকে, সাদুল্লাপুরে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সবকিছু বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন এলাকাবাসী।

জেলার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ বলেন, সোমবার দুপুরের পর ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের চার সদস্যের একটি টিম সাদুল্লাপুর পৌঁছেছে। ওই টিমের সদস্যরা সাদুল্লাপুর উপজেলার হবিবুল্লাপুর গ্রামের বিয়ে অনুষ্ঠানের যে ২৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।

“এছাড়াও তারা জেলার বিভিন্ন এলাকায় কোয়ারেন্টিনে থাকা সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন; তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

তিনি আরও জানান, সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদেশ ফেরত ১৩৯ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩৫ জনই প্রবাসী।

এদিকে, ঢাকা থেকে আসা আইইডিসিআরের চার সদস্য গণমাধ্যম্য কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

সোমবার সরেজমিনে সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, শহর অনেকটা ফাঁকা। লোকজন ও যানবাহন চলাচল অনেক কম। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া শহরে বের হচ্ছে না। যারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারা মাস্ক পরে বের হচ্ছেন। দ্রুত কাজ সেরে বাড়ি ফিরছেন।

উপজেলা শহরের কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বলেন, “প্রতিদিন সকালে ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়; কিন্তু আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র দুই-তিনজনের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করেছি।”

একই বাজারের চাল ব্যবসায়ী হাশেম মিয়া বলেন, “আমার দোকান থেকে সকালেই বেশি চাল বিক্রি হয়। দুই-তিনজন কর্মচারী দিয়ে চাল বিক্রি করতে হয়; কিন্তু আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত একজনের কাছে চাল বিক্রি করেছি।”

জামুডাঙ্গা গ্রামের রিকশাচালক জয়নাল মিয়া বলেন, “ছয় বছর ধরে উপজেলা শহরে রিক্সা চালাই; কিন্তু আজ ১টা পর্যন্ত একটি ভাড়া মেরেছি। লোকজন কম। রিকশায় ওঠে কে।”

ওই বিয়ে বাড়ির গৃহকর্তা বলেন, তাদের বাড়িতে চার জনসহ তাদের ২৪ জন আত্মীয় নিজ নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। তবে কারও অবস্থা খারাপ নয়।

সাদুল্লাপুরের বিয়ে বাড়ির ওই গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন সরকার বলেন, “ওই বিয়ের আগে ও পরে তাদের গ্রামে কমপক্ষে ১৫টি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। এছাড়া তাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটি ছিল গাইবান্ধা-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের একটি ভোট কেন্দ্র। ফলে আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।”

উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোনতেজার রহমান চঞ্চল বলেন, “সাদুল্লাপুর লক ডাউন না করায় আমরা সবাই আতঙ্কিত। এখন যদি করোনার কারণে আমাদের উপজেলার জনগণের কোনো ক্ষতি হয় তার দায়দায়িত্ব কে নেবে?”

সাদুল্লাপুর উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি শফিউল ইসলাম স্বপন বলেন, “উপজেলা সদর থেকে ওই গ্রামটির দুরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। ওই গ্রামের লোকজন সাদুল্লাপুর উপজেলা সদরে হাট-বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে থাকে। এই অবস্থায় আমরা চরম উৎকন্ঠার মধ্যে আছি।”

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সামসুজ্জোহা প্রামানিক রাঙ্গা বলেন, “গত ১৩ মার্চ বিয়ের অনুষ্ঠান ও ১৪ মার্চ বিবাহত্তোর বউ ভাতের অনুষ্ঠানে আসা শনাক্ত হওয়া দুই করোনা রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাদের সকলকে শনাক্ত করা এখন খুবই কঠিন। তাই সাদুল্লাপুরবাসীর সুরক্ষার জন্য সাদুল্লাপুরকে লক ডাউন করা প্রয়োজন।”

কিন্তু জেলা প্রশাসক এখনও তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলে মনে করেন।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, “লক ডাউন করার পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। প্রয়োজনে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”