বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অনাথ শিশু-কিশোরদের একদিন

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনন্দঘন একটি দিন প্রায় এক হাজার প্রতিবন্ধী ও এতিম শিশু-কিশোরের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। 

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2019, 04:06 PM
Updated : 30 March 2019, 04:06 PM

তাদের কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী, আবার কেউ বাক প্রতিবন্ধী এবং এদের কারও বাবা নেই, কারও মা নেই; সবাই অনাথ। তারা দেশের বিভিন্ন সরকারি আশ্রমে থাকে। 

শনিবার অন্যান্য দর্শনার্থীদের পাশাপাশি এই অনাথ শিশু-কিশোরাও আনন্দে মাতে। তারা বিনা পয়সায় পার্কের সকল ইভেন্ট ঘুরে দেখার সুযোগও পায়।

সকাল থেকেই ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ২৯টি সরকারি আশ্রমের হাজারের উপর শিশু-কিশোরের কলকাকলীতে মুখরিত ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।

টাঙ্গাইল সরকারি শিশু সদনের ১০ বছর বয়সী শিশু আঞ্জুমানারা। জন্মের পরই বাবা মারা যান, মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তার আশ্রয় হয় জেলা শহরের সরকারি আশ্রমে। আগে সরকারিভাবে বিভিন্ন সময় বিনোদনের চাহিদা পূরণ হলেও এবারটা ছিল ভিন্ন রকমের।

এখানে সে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা বাঘ ও সিংহ মুক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে খুবই আনন্দিত বলে জানিয়েছে।

ঢাকার মিরপুরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সোহেল চৌধুরীর (১৪) বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে হলেও প্রায় সাত বছর ধরে সরকারি আশ্রমে রয়েছে। চোখে দেখতে না পেলেও সাফারি পার্কে সে বিভিন্ন প্রাণীর বিচিত্র রকমের ডাক ও চিৎকার চেঁচামেচিতে খুব আনন্দ পেয়েছে।

আরেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মফিজুল হক (১২) ভালো গান গাইতে পারে। আনন্দ-উল্লাসে শরীরে সামান্য ক্লান্তি আসায় সে গাছের ছায়ায় বসে গান ধরেছে, “নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, সকল বাঁধা পেড়িয়ে...।” অন্যরা মনোযোগ দিয়ে তার গান শুনছে।

গান শেষ হলে মফিজুল বলে, সে এসেছে ফরিদপুর থেকে। এখানে আসতে পেরে এর উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানায় সে।

ময়মনসিংহের অনাথ কিশোরী রোজিনা আক্তার (১৩) বলে, বিভিন্নজনের কাছে সে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কথা শুনেছে। এবার এটি দেখার সুযোগ পায়। সে এখানে খুবই আনন্দ করেছে।

টাঙ্গাইল সরকারি শিশু সদনের (বালক) উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুরে লাইলা ৫০ জন অনাথ শিশু কিশোর নিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, এরা সবাই অসহায় হলেও সরকার এসব শিশু-কিশোরদের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের বাবা ও মায়ের অভাব পূরণ করা না গেলেও তাদের অন্যান্য সবকিছুই সরকার পূরণ করে থাকে। এই সাফারি পার্কে আসতে পেরে তারা খুবই উল্লসিত।

কিশোরগঞ্জের সরকারি শিশু পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সাবিতা আলম তার কেন্দ্রের ৪২ জন অনাথ শিশু কিশোর নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট দেখছেন সকাল থেকেই।

তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো সাফারি পার্কে অনাথরা আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। তারা একটি নির্দ্দিষ্ট গন্ডির ভিতর থেকেই বড় হচ্ছে। তবে এতবড় পরিসরে সকল অনাথরা একসাথে চিত্তবিনোদনের সুযোগ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম আনোয়ারুল করিম বলেন, গত ২৮ ও ২৯ মার্চ গাজীপুরের কোনাবাড়িতে অবস্থিত দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এতে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার ২৯টি সরকারি শিশু পরিবার কল্যান কেন্দ্রের প্রায় এক হাজারেরও উপরে অনাথ শিশু, কিশোর ও প্রতিবন্ধীরা অংশগ্রহণ করে।

তিনি জানান, দূর-দূরান্ত থেকে এসব অনাথরা এখানে আসায় তাদের আনন্দে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে সাফারি পার্ক পরিদর্শনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অনাথ শিশুদের চিত্তবিনোদনের এই উদ্যোগ নিয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা একসঙ্গে এতগুলো অনাথ শিশু-কিশোরের কথা বিবেচনা করেই সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব অনাথদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তাবিবুর রহমান বলেন, সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রায় এক হাজার অনাথ শিশু-কিশোরের বিনামূল্যে প্রবেশসহ সকল ইভেন্টই বিনামূল্যে পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অনাথদের আগমনে সকাল থেকেই পার্কটি হৈ-হুল্লোড় ও উল্লাসে মুখরিত ছিল।