গাজীপুরে অপহরণ: পুলিশের পর ২ বন্ধু গ্রেপ্তার

গাজীপুরে তিন তরুণকে অপহরণের পর মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশের পর অপহৃতদের দুই বন্ধুসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2019, 05:34 PM
Updated : 13 Feb 2019, 05:46 PM

গ্রেপ্তার দুই বন্ধু মঙ্গলবার গাজীপুর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপড়ার মৃত হাজী ইসলাম উদ্দিনের চেলে মো. তরিবুল্লাহ (২১), টঙ্গাইলের মির্জাপুর সদরের মনির হোসেন (২৪) ও মজনু মিয়া (৩০)।

এর আগে ওই অপহরণের অভিযোগে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৫) ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।

গাজীপুর গোয়েন্দা শাখার সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিন বন্ধুকে অপহরণ করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন পুলিশের দুই সদস্য।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় কালিয়াকৈরের বড়ইবাড়ির হান্নান সরকারের ছেলে রায়হান সরকার (২২) বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। মামলায় কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়। 

পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য কালিয়াকৈর থানা থেকে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্থান্তর করা হয় বলে তিনি জানান।

“গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ গত মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করে। এছাড়া অপহরণে দুই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে জড়িত মো. তরিবুল্লাহ, মনির হোসেন ও মজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।”

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তরিবুল্লা ও পুলিশের সহযোগী মনির হোসেন গত মঙ্গলবার গাজীপুর বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান সহকারী পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান ।

মাহবুবুর আরও বলেন, অপহৃত তিন বন্ধুর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্যেশ্যে ওই দুই পুলিশ সদস্যের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে তাদের অপর বন্ধু মো. তরিবুল্লাহ ও মনির হোসেন এবং মজনু মিয়া।

“পরিকল্পিতভাবে সেদিন তরিবুল্লাহ তাদের গাড়ি থেকে তার সহযোগীকে নিয়ে নেমে যায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। সেই অনুযায়ী পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে আগেই চুক্তি ছিল টাকা পেলে তাদেরকেও একটি ভাগ দিতে হবে।”

ওই দুই পুলিশ সদস্য যখন গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তখন তরিবুল্লাহ ও মনির হোসেন তাদের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন বলে মাহবুবুর জানান। 

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে রায়হান সরকার, লাবিব উদ্দিন, নওশাদ ইসলাম, তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তারা গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং ষ্টেশনে যান।

তখন সাদা পোশাকে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানসহ ৬-৭ জন লোক একটি মাইক্রো নিয়ে ওই যুবকদের গাড়ি গতিরোধ করেন।

এরপর গাড়ি থেকে রায়হান মিয়া, লাবিব উদ্দিন ও  নওশাদ ইসলাম জোড়পূর্বক ধরে নিয়ে যান এবং তিন বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় তাদের স্বজনদের। 

পুলিশ খবর পেয়ে বুধবার রাতেই তাদের উদ্ধার করে।