রাজশাহীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি, অর্থ ফেরতের উদ্যোগ

রাজশাহীতে সরকারি গৃহনির্মাণ প্রকল্পে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সংগৃহীত অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2018, 05:19 PM
Updated : 6 Sept 2018, 05:36 PM

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার পুঠিয়া উপজেলা পরিষদে বৈঠকে বসেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সেখানে উপকারভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার ‘রাজশাহীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ‘অর্থ আদায়’’ শিরোনামে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়।

‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ শীর্ষক ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার।

এ প্রকল্পে উপকারভোগী প্রত্যেককে এক কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘর করে দেওয়া হবে, যার দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট এবং প্রস্থ সাড়ে ১০ ফুট; সঙ্গে থাকবে পাঁচ ফুট প্রস্থের একটি বারান্দা এবং একটি রিং শৌচাগার। টিনের বেড়া ও টিনের চালের ঘরটির মেঝে হবে পাকা। প্রতিটি ঘর নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা।

ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদে বৈঠককে বসেন জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের। ওই বৈঠকে পুঠিয়া ও বেলপুকুর থানার ওসি ছাড়াও তিনটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ডাকা হয়, যে তিনটি ইউনিয়নে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে সরকারি প্রকল্প বাস্তাবায়ন চলছে।

ইউএনও বলেন, ওই বৈঠক থেকে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও মাহবুব হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে শুক্রবারের মধ্যে তারা সবাইকে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

“শুক্রবারের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।”

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বৈঠকে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনও দাখিল করে; যাতে উল্লেখ করা হয়েছে তিনটি ইউনিয়নের ৩০৪ উপকারভোগী পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইউপি সদস্য ও স্থানীয় প্রশাবশালী ব্যক্তিরা প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। যাদের অনেকের নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে।

ইউএনও জানান, টাকা ফেরত দেওয়া নিশ্চিত করতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে। শনিবার তিনটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হবে, রোববারের মধ্যে যারা যারা টাকা নিয়েছে তারা যেন টাকা ফেরত দেয় এবং উপকারভোগীরা ফেরত নেন।

এছাড়াও উপকারভাগীরা টাকা ফেরত পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে শুনানি হবে। সেখানে সকালকে ডাকা হবে এবং যানতে চাওয়া হবে টাকা ফেরত পেয়েছে কিনা।

ইউএনও আরও জানান, সোমবার বেলা ১১টায় বেলকুপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এবং একই দিন বিকেল ৩টায় বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ শুনানির আয়োজন করা হবে। এর পরেদিন বেলা ১১ টায় শুনানি হবে জিউপাড়া ইউনিয়নে।

‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ কাজে ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পে পুঠিয়া উপজেলায় ১৮৮টি ঘর নির্মাণ করার কথা, যাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এছাড়াও বানেশ্বর ইউনিয়নে ৫৫টি ও জিউপাড়া ইউনিয়নে ৬১টি ঘর বরাদ্দ আসে।

এসব ঘর নির্মাণে উপকারভোগীদের তালিকা তৈরির সময় তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন উপকারভোগীরা। এর প্রেক্ষিতে ইউএনও তিন সদস্যের তদন্ত দল গঠন করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আল ওয়াদুদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন ইউএনও।