কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু

মাছের বংশবৃদ্ধি ও প্রজনন সহায়তার জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও কয়েক মাসের জন্য কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

ফজলে এলাহী রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2018, 05:53 PM
Updated : 30 April 2018, 05:53 PM

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সোমবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সোমবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই হ্রদের পুরো এলাকায় মাছ আহরণ, বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে প্রতিবছর কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়।

কাপ্তাই হ্রদের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদে কার্প প্রজাতির মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কাপ্তাই হ্রদ দেশের কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের অন্যতম স্থান।

তিনি বলেন, এ সময় মাছ শিকার বন্ধে কাপ্তাই হ্রদে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে এবং স্থানীয় বরফ কলগুলো বন্ধ থাকবে।

“এখানকার প্রায় ২০ হাজার জেলে কাপ্তাই হ্রদ থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আমরা এ বছর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ডিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করব।”

এ বছর কাপ্তাই হ্রদে ছোট মাছের উৎপাদন কমেছে; কিন্তু কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে; তাই রাজস্ব আয়ও বেড়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে কাপ্তাই হ্রদে কার্প মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হতো না। এ বছরই কাপ্তাই হ্রদে প্রাকৃকিত প্রজনন ঘটেছে এবং তা ব্যাপকভাবে।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, গত বছর এই সময়ে ১২ কোটি ১২ লাখ টাকার মতো রাজস্ব আয় ছিল। ইতিমধ্যে ১২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা রাজস্ব অর্জন হয়েছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে ১ মে থেকে আগামী তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

মাছ শিকার বন্ধে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিমও কাজ করে যাবে। এ সময় কেউ হ্রদে মৎস্য আহরণ করলে অপরাধ অনুযায়ী তাকে দণ্ড দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে প্রতিবছর হ্রদের উপর নির্ভরশীল প্রায় ২০ হাজার জেলেকে এবারও মাছধরা বন্ধকালীন ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য বাঁধ দেওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদের। এই বাঁধের কারণে পানিতে তলিয়ে যায় রাঙামাটি শহরসহ পার্বত্য রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিতে নিমগ্ন হয় ৫৪ হাজার একর ফসলি জমি।