সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটার সংস্কার দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।
Published : 11 Apr 2018, 01:52 PM
তারা প্রধানত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটক ও সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের স্লোগান দিচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বুধবার সকাল ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। তারা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘৫৬ ভাগ কোটা মানি না, মানব না’, ‘বুদ্ধিবৃত্তি মুক্তি পাক, কোটা প্রথা নিপাত যাক’, ‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়। ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
“উপাচার্য মহোদয়ও বলেছেন ছাত্রদের এই দাবি যৌক্তিক। আমরা আমাদের এই যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, “দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মেধাবীদের প্রয়োজন। মেধাবীরা সামনে এগিয়ে আসলে আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে। সর্বজন স্বীকৃত যৌক্তিক এই দাবি সরকার অবশ্যই বিবেচনা করবে বলে আমার বিশ্বাস।”
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী অলক বলেন, “সকল শিক্ষার্থীরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস অটকাচ্ছি না। তবে কোনো শিক্ষার্থী বাসে উঠছে না। খালি বাস যাতায়াত করছে।”
আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার হেপী বলেন, “৫৬ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। এত পরিমাণ কোটার মাধ্যমে মূলত মেধাবীদের দমিয়ে রাখা হচ্ছে।”
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।
বর্তমানে দেশে পাঁচ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য। প্রতিবন্ধীর জন্য এক শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ। সব মিলিয়ে কোটার জন্য বরাদ্দ ৫৬ শতাংশ।
ফলে এর কোনো শ্রেণিতে যারা পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য।
আন্দোলনের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে আমরা পরবর্তী দিনের কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলব।”
কুমিল্লায় আন্দোলন
‘একাত্তরের চেতনা কোনো বৈষম্য মানে না’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি শ্লোগানে কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্ত্বর।
বুধবার সকাল ১০টায় নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পূবালী চত্ত্বরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে।
প্রথমে পুলিশ বাধা দিলেও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অধিক হারে বেড়ে পূবালী চত্ত্বর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দখলে চলে যায়। তারা সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছেন।
ফরিদপুর
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে।
তবে দূরপাল্লার যানবাহন বাইপাস সড়ক ব্যবহার করায় যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষককেও দেখা গেছে।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আকতার বানু বলেন, “আমি এই আন্দোলন সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই। প্রথমত এ আন্দোলন সরকারবিরোধী নয়। দ্বিতীয়ত, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও নই। কোটা সংস্কার আন্দোলন নায্য আন্দোলন। এটি সারাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।”
‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছি। তবে মাস্টার্স ও চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা এ কর্মসূচির বাইরে থাকবে। এছাড়া দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমাদের মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলবে।”
প্রক্টর লুৎফর রহমান বলেন, “আমরা বলেছিলাম, তারা যেন ক্যাম্পাসের ভেতরে আন্দোলন করে। কিন্তু তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে, কোনোভাবেই সহিংসতা ঘটাবে না। আন্দোলনটি অহিংস হবে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সারাদেশের মতো এখানেও আন্দোলনটি চলছে।”
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও সব বিভাগের ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টা থেকে তারা তাদের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুরে আন্দোলন
শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল সকালে সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে পথসভা করেছে।
পথসভায় কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রানেল হাওলাদার, “আমাদের আন্দোলন কোটার বিপক্ষে না। আমরা আন্দোলন করছি কোটা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্য।
“আমরাও চাই মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক। কিন্তু এত বৈষম্য করে না। প্রকৃত মেধাবীদের যদি মূল্যায়ন করা না হয়, তাহলে দেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে।”
এ সময় তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান নেয়।
মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে ওই মহাসড়কে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যানবাহনগুলো বাইপাস সড়ক ব্যবহার করে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নাইমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দাবি না মানা পর্যন্ত তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।”