গাজীপুরে পোশাক কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও একজনের লাশ পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা; এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে।
Published : 04 Jul 2017, 10:05 AM
কাশিমপুরের নয়াপাড়ায় ‘মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড’ নামের ওই কারখানার ডাইং সেকশনের বয়লায় সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে চার তলা ভবনের একপাশের এক থেকে দোতলা পর্যন্ত ধসে পাড়ে।
ঘটনার পরপরই কারখানার লোকজন ও এলাকাবাসীর সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। কারখানার ভেতরের ধ্বংস্তূপ থেকে রাতে উদ্ধার করা হয় ছয়জনের লাশ। ৪৭ জনকে হাসপাতালে পাঠানোর পর মারা যান আরও তিন জন।
জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক মো. শাহিন মিয়া জানান, রাত ১টার পর বৃষ্টির জন্য উদ্ধার কাজ স্থগিত রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার ভোরে আবার তল্লাশি শুরুর পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এক যুবকের লাশ পাওয়া যায়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর, সাভার ইপিজেড, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন বলে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কেউ হতাহত আছে কিনা তা খুঁজে দেখা যাচ্ছে।”
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল খালেক জানান, মঙ্গলবার সকালে ওই কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস টানিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাশের কটন ক্লাব, ইসলাম নিটওয়্যার, আলিম ফ্যাশন লিমিটেড, ডেল্টা ফ্যাশন, মাস্কো লিমিটেডসহ ১০টি কারখানায় মঙ্গলবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঈদের ছুটির পর মঙ্গলবার কারখানাটি খোলার কথা ছিল। তার আগে সোমবার দুপুরে কারখানার ডাইং ইউনিটের বয়লার সেকশনটি চালু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ঘটনার সময় প্রায় অর্ধশত কর্মী সেখানে কাজ করছিলেন।
শ্রমিকরা জানান, সন্ধ্যায় বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণের পর নিচতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত একাংশের দেয়াল, দরজা, জানালা ও যন্ত্রাংশ উড়ে আশেপাশে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদ হাসান জানান, নিহতদের মধ্যে নয়জনের পরিচয় জানতে পেরেছেন তারা। তাদের মধ্যে চারজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
“অন্যদের স্বজনদেরও খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে হাসপাতাল থেকে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।”
যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন- বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার নামাজখালী গ্রামের শাহার আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান (২৩), চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার বামনসুন্দর গ্রামের মোকছেদ আহমেদের ছেলে আব্দুস সালাম (৫৫), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের বাচ্চু ছৈয়ালের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩০), মাগুরার হরিশপুর থানার গোবরা গ্রামের আইয়ুব আলী সরদারের ছেলে আল আমিন (৩০), রাজবাড়ী গোয়ালন্দ থানার বরাট বাজার এলাকার মনিন্দনাথের ছেলে বিপ্লব চন্দ্র শীল (৩৮), ব্রাহ্মবাড়িয়ার নাসির নগর থানার কুণ্ডা গ্রামের সাগর আলী মীরের ছেলে মজিবুর রহমান (৩৭) এবং মনসুর (৩০) ও আরশাদ হোসেন (৩৬) নামে দুজন।
শেষ দুজনের নাম পাওয়া গেলেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া গাইবান্দা জেলার পলাশবাড়ি থানার মরিয়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে সোলেমান মিয়ার (৩০) লাশ রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আহতদের মধ্যে রুকন (২৫) ও কামরুল ইসলাম (৩২) নামে দুইজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা গাজীপুরের শরীফ মেডিকেলে ও কোনাবাড়ি ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছেন।
ঘটনা তদন্তে দুই কমিটি
ঘটনার পর পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানান।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ, শিল্প পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদর্শক, কলকারখানা পরিদপ্তর, বিজিএমইএ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এই তদন্ত কমিটির সদস্য।
এই কমিটিকে বয়লার বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সদর দপ্তরের স্টেশন কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান।
ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের (ঢাকা) সহকারী পরিচালক দীলিপ কুমার ঘোষকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের চিকিৎসার খরচ দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।