ফরিদপুরে সাংবাদিককে পেটালেন ‘মেয়রের ভাই’

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে; যিনি সাংবাদিক মুজাহিদকে মারধরে সহযোগিতা করেছিলেন।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2022, 03:43 PM
Updated : 1 August 2022, 03:43 PM

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় স্থানীয় এক সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে আলফাডাঙ্গা পৌর মেয়রের ভাই ও তার কয়েকজন সঙ্গীর বিরুদ্ধে।

সোমবার দুপুরে আলফাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম জানান।

স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ একজনকে আটক করেছে।

আহত মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম ঢাকা টাইমস পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আলফাডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সাংগাঠনিক সম্পাদক।

তিনি বলেন, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ভাই জাপান ও তার পাঁচ-ছয়জন সহযোগী হঠাৎ হামলা চালায়। তাকে লোহার রড, স্ট্যাম্প, দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় তাকে বাঁচাতে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তাদের ওপরও চড়াও হয় হামলাকারীরা। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে আলফাডাঙ্গার রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে যান রমিজ নামে এক যুবক। তিনি টিকিটের দাম পরিশোধ করে ঢাকাগামী একটি বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে টিকিট কাউন্টার থেকে বলা হয়, রমিজ টিকিটের টাকা দেননি; তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি জানিয়ে সাংবাদিক মুজাহিদের সহযোগিতা চান রমিজ।

ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে চাইলে সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর চড়াও হন ওই কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান ও তার সহযোগীরা। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এ সময় পাশে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তাদের ওপর চড়াও হন হামলাকারীরা।

আলফাডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম বলেন, “বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, মুজাহিদকে দুর্বৃত্তরা লোহার রড, কাঠের বাটাম দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার হাত ও পায়ে বেশ জখম হয়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করছেন।”

‘হত্যার উদ্দেশ্যেই মুহাজিদকে পেটানো হয়েছে দাবি করে স্থানীয় এ সাংবাদিক নেতা বলেন, “তাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়রা এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে জানানো হয়েছে।”

এদিকে, স্থানীয় প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার বলেন, “আমি এখন জেলার বাইরে আছি। জেলায় এসে বলতে পারব কি হয়েছে।”

তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ভাই জাপানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ইতোমধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে এটি মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

এ ঘটনায় আলফাডাঙ্গার ইউএনওকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান।