গোপালগঞ্জ সদরের লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট শেষে নির্বাচনী সরঞ্জাম ‘ছিনতাই চেষ্টার’ সময় হামলা ও সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
ইয়াসিন শেখ (৩৫) নামের এই যুবক গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের রাজ্জাক শেখের ছেলে। তিনি ট্রলিচালক ছিলেন।
ইয়াসিনের ভাবি আমেনা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই মৃত্যুর খবর জানান।
তবে এখন পর্যন্ত তার মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ নিশ্চিত করেনি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, অন্যদের মতো তিনিও ওই যুবকের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। তবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানাতে পারছেন না।
সোমবার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার লতিফপুর ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরমানিকদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়। ভোট গ্রহণ শেষে গণনা করে ওই ওয়ার্ডে সাবু মোল্লাকে সদস্য পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ভোটে পরাজিত হন তিন সদস্য প্রার্থী মতিয়ার রহমান ফকির, পলু মোল্লা ও ইব্রাহিম কাজী।
পুলিশ জানায়, ভোট শেষে নির্বাচনী মালামাল ও ইভিএম নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা গোপালগঞ্জ জেলা সদরে ফিরছিলেন।
পথে একদল লোক তাদের ওপর হামলা চালিয়ে নির্বাচনী মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ শটগানের গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই সময় ইয়াসিন শেখ (৩২), কালাম শেখ (৩৫) ও সম্রাট মোল্লা (৩২) হন। সম্রাট ও কালামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াসিন শেখকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই সময় সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সদর থানার ওসির গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করা হয়। এতে ওসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় তিন জনকে আটক করে পুলিশ।
পরে সোমবার রাতে পুলিশের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত চারশ-পাঁচশ জনকে আসামি করে এসআই গণেশ বিশ্বাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
এ ছাড়া ইভিএম ছিনতাইয়ের অভিযোগে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম তালুকদার বাদী হয়ে মঙ্গলবার অজ্ঞাত পরিচয় ১০০০ জনকে আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় আরেকটি মামলা করেছেন।
ইয়াসিনের লাশ বাড়ি এসেছে
ইয়াসিনের ভাবি আমেনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় বেসরকারি বিএন হাসপাতালে ইয়াসিন মারা যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামে এসে পৌঁছেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইয়াসিনের লাশবাহী গাড়ি গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
ইয়াসিনের বাবা-মা ছাড়াও স্ত্রী আর দু্ই সন্তান রয়েছে।
একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দরিদ্র এই পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন