জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, “আমাদের তিনটি দাবি যদি মানা না হয় তাহলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও আন্দোলনে যাব।”
Published : 27 Jun 2024, 08:03 PM
সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
তিনটি দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে এই কর্মবিরতি করেন তারা। এর আগে মঙ্গলবার-বুধবারও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে জাবি শিক্ষক সমিতি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার ছাড়া শিক্ষকদের অন্য দুটি দাবি হল- প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের কর্মবিরতিতে অংশ নিয়ে জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, “আমাদের তিনটি দাবি যদি মানা না হয় তাহলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও আন্দোলনে যাব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুর রব বলেন, “তিন দাবিতে আমাদের এ আন্দোলন যৌক্তিক। শিক্ষক সমিতির তত্ত্বাবধানে আমরা যে কোনো ধরনের যৌক্তিক আন্দোলন করে যাব। সরকারের উচিৎ শিক্ষকদের দাবি মাথায় নিয়ে কাজ করা।”
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, “আমরা বেশি কিছু চাই না, আমাদের শুধু চাওয়া সম্মান। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে সম্মান দিয়ে গেছে তা যেন কেউ বিনষ্ট না করে। আমরা সম্মানজনকভাবে জ্ঞান চর্চা করতে চাই।
“কিন্তু আমাদের ফেডারেশনকে বাইরে রেখে অত্যন্ত সুচতুরভাবে আমাদেরকে পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকেই এর অন্তর্ভুক্ত করেছে অথচ আমলারা কেউ এর মধ্যে নেই।”
শিক্ষকদেরকে ‘সম্মান না দিয়ে’ আধুনিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “আমরা যে সম্মানজনকভাবে পেনশন পেতাম সেটি যেন আবার ফিরে আসে। এই সরকার এবং রাষ্ট্র যেন আমাদের প্রতি অবিচার না করে। সরকারের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়।”
তিনি বলেন, “শিক্ষকরা যদি রাস্তায় নামে তাহলে এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। আমরা ‘প্রত্যয়’ স্কিম থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।”
সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে জাবিতে কর্মবিরতি
সমাপনী বক্তব্যে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, “আমাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার ও জারিকৃত প্রজ্ঞাপন তুলে না নেওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরব না। কোনো শিক্ষক তাদের দায়িত্ব পালন করবে না। একাডেমিক হোক বা গবেষণা হোক আমরা কোথাও অংশগ্রহণ করব না। প্রক্টর তার দায়িত্ব পালন করবে না, ডিনরা তাদের দায়িত্ব পালন করবে না, বিভাগের সভাপতি ক্লাসে আসবে না।”
এর আগে ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১ জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়ারা এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানান হয়।
পরে প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২৫-২৭ জুন তিনদিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। পরীক্ষাসমূহ এই কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে; তবে পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
তবে ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে; এই সময় ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজসহ সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে।