রাজবাড়ীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজে লাভের আশা

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে জেলায় ১৫৯ হেক্টর পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।

রাজবাড়ী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2022, 05:41 AM
Updated : 14 Nov 2022, 05:41 AM

রাজবাড়ীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে অনেক কৃষকের রোপন করা পেঁয়াজ নষ্ট গেছে। এরপরও ক্ষতি কাটিয়ে লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।

এ বছর জেলায় ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন শেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছর জেলায় ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি।

রোববার জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে রোপন করা মুড়িকাটা পেঁয়াজ পরিচর্জায় মাঠে ব্যস্ত চাষিরা। কেউ জমিতে নিরানি দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, কেউ ছিটাচ্ছেন কিটনাশক।

সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরবেনিনগর গ্রামের চাষি আবজাল হোসেন বলেন, “একবিঘা জমি লিজে বছরে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। জমি চাষ, সেচ, সার, পেঁয়াজ বীজ, শ্রমিক দিয়ে প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ চাষে খরচ পড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা। এ বছর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জমিতে লাগানো অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে। আবার নতুন করে লাগানো হচ্ছে।”

একই গ্রামের চাষি সোহরাব মোল্লা বলেন, “একবার পেঁয়াজ লাগাই ছিলাম বৃষ্টিতে পচে গেছে; আবার লাগাচ্ছি। এক বিঘায় খরচ পড়বে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ কি যে দিবি, সেটা বলা যাবে না।”

চাষি মো. হাশেম বলেন, “এ বছর জমি চাষ, সার, সেচ ও শ্রমিক খরচসহ বেড়ে যাওয়ায় ঘরে উঠানো পর্যন্ত বিঘা প্রতি মুড়িকাটা পেঁয়াজের খরচ পড়বে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদন হবে ৫০-৬০ মণ। ভারতের পেঁয়াজ আমদানি না করলে কিছুটা লাভ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, “বৃষ্টিতে তো অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। জমি থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত এক মণ পেঁয়াজে খরচ হয় প্রায় ১ হাজার টাকা। আর বিক্রি করতে হয় ৮-৯’শ টাকায়। এতে কৃষকের লোকসান হয। পেঁয়াজের দাম ১৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা হলে কৃষকেরা লাভবান হবে।”

পাংশা উপজেলার ফারুক মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে পাঁচ মন পেঁয়াজের বীজ লাগাতে তার দশ হাজার টাকা লেগছে। এরপর সার লাগবে পাঁচ হাজার টাকার। জমি চাষে আরও দুহাজার।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের সুনাম রয়েছে বহু বছর আগে থেকেই। সারা দেশের উৎপাদিত পেয়াজের ১৪ শতাংশ এই জেলাতে হয়। জেলায় প্রতি মৌসুমে মুড়িকাটা ও হালি-এ দুই জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। এর মধ্যে মুড়িকাটা আগাম জাত। এবারও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।

মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপনের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা যায়। পেঁয়াজ চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিরাজ শেখ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে জেলায় ১৫৯ হেক্টর পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ২ হাজার ৩১০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৬৫০ জন কৃষককে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।