মৌলভীবাজারের কৃষক জোবায়ের বলছিলেন, “ব্রি-২৮ এবার বেইমানি করছে; ক্ষেতকে ক্ষেত ছিটা।”
Published : 05 Apr 2023, 10:27 PM
মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে কিছু জায়গায় ব্রি-২৮ ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। ধানের অধিকাংশই চিটা, ফলে তারা বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে ‘খোরাকি’ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইউছুপপুর, নোয়াগাঁও, রাজাপুর ও উত্তরভাড়াউড়া গ্রামের কৃষকদের অভিযোগ, ধানে ব্লাস্ট রোগ ধরার পর কৃষি কর্মকর্তারা ছত্রাকনাশক বিষ দিতে বললেও তাতে কোনো কাজ হয়নি।
শত শত কৃষকের ব্রি-২৮ ধানের জমির প্রায় ৯০ ভাগ চিটা হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকের খরচও উঠছে না। কেউ কেউ ধান জমিতেই ফেলে রাখছেন। কেউ হয়তো গরুকে খাওয়ানোর জন্য কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছু জমির ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ব্রি-২৮ অনেক পুরাতন একটি জাত। এটি এখন চাষ করতে কৃষকদের আমরা নিরুৎসাহিত করি। পরিবর্তে ব্রি-৮৮ ও ব্রি-৮৯ চাষের জন্য পরামর্শ দেই।”
কৃষি বিভাগ জানায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এবার ১১ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ চাষ হয়েছে দুই হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১৬৮ বিঘা জমিতে ব্লাস্ট রোগে আক্রমণের উপস্থিতি পেয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বোরো চাষি নোয়াগাঁও গ্রামের ইউছুপ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি হাওরের নিচু অংশে ১৫ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেন। ধান যখন পাকা শুরু করছে তখন লক্ষ্য করেন প্রায় সব ধানে ছিটা।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে দাবি করেন ইউছুপ।
এ সময় একই গ্রামের কৃষক জোবায়ের মিয়া তার জমির ধান দেখিয়ে বলেন, “ব্রি-২৮ এবার আমাদের সঙ্গে বেইমানি করেছে। ক্ষেতকে ক্ষেত ছিটায় ভরে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “নিজের লোক নাই। রোজকামলা দিয়ে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে ১২ কিয়ার জমির চাষ করেছিলাম। সবই শেষ। এবার চাল কিনে খেতে হবে।“
নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক অঞ্জু কর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার নিজের জমি নেই। সাত বিঘা জমি বর্গা চাষ করেছিলাম। মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে এনে চাষ করেছিলাম। এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।”
ইউছুপপুর গ্রামের কৃষক শামীম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এভাবে দুর্যোগ আসবে তারা ভাবতেও পারেননি।
তিনি বলেন, “পুরো ধানের ছড়ার প্রায় ৯০ ভাগ ছিটা। ১০ ভাগ ভালো থাকলেও কাটানো খরচ দিয়ে তা পোষাবে না; তাই কেউ তা কাটার চিন্তা করছে না। অনেকে তা কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছে।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন বলেন, “ব্লাস্ট রোগ যখন প্রথম ধরা পড়ে তখন পাতা একটু একটু মরতে শুরু করে। তখনই কৃষকদের দুই রাউন্ড ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেই। একই সঙ্গে ইউরিয়ার পরিবর্তে পটাশিয়াম সার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
“অনেক কৃষক এই অল্প পাতা মরায় কিছু হবে না ভেবে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেননি। কেউ কেউ এক রাউন্ড করেছেন। কিন্তু যারা প্রপার নিয়ম মেনেছেন তাদের ফসল নষ্ট হয়নি।”
শ্রীমঙ্গল কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা বলেন, “ব্লাস্ট ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের এ থেকে উত্তরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ১০০ বিঘার উপরে জমির ধান নষ্ট হয়নি।”
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাইল হাওর, কাউয়াদিঘি হাওর ও হাকালুকি হাওরের নিচু এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় আট হেক্টর এলাকায় বি-২৮ ও বি-৪৮ জাতের ধান নষ্ট হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।”
তবে এটি মূল উৎপাদনে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না বলেও মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।