শেরপুরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া

অধিক সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

মো. আব্দুর রহিম বাদলশেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2022, 04:17 PM
Updated : 1 Nov 2022, 04:17 PM

কয়েকদিন ধরে শেরপুরে ব্যাপক আকারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে।  

প্রতিদিন জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকছে শতাধিক রোগী। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় মেঝেতে রেখে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। 

অধিক সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।  

শেরপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জেলা সদর হাসপাতালে স্যালাইন সংকট দেখা দেয়; ঢাকা থেকে অতিরিক্ত স্যালাইন আনা হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ডায়রিয়া রোগী ১৫ থেকে ২০ জন থাকলেও এক সপ্তাহ ধরে রোগীর সংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে গেছে। 

এই সময়ে কী কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ হয়েছে তা চিকিৎসকরা বলতে না পারলেও আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে এমনটা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।   

জেলা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা প্রদানকারী কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সোহেল আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছে ১৩০ জন। মঙ্গলবার সকালে ২০ জন রোগীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ রোগী ভর্তি হচ্ছে।  

“প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জনের মতো রোগীকে আমরা ছুটি দিচ্ছি। গতকাল ৩১ অক্টোবর সোমবার একদিনেই ৮৫ জন ডায়রিয়া রোগী জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।” 

তবে গত ৭ দিন ধরে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হলেও কোনো রোগী মারা যায়নি বলে তিনি জানান। 

তিনি বলেন, “আগে ডায়রিয়ার এত প্রকোপ ছিল না। কেন এমন হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। এবারের ডায়রিয়া রোগটা একটু ক্রিটিক্যাল। যারা হাসপাতালে আসছেন তারা খারাপ অবস্থা নিয়ে আসছেন।” 

এই হাসপাতালে ভর্তি শেরপুর পৌরসভার সজবরখিলা মহল্লার বাসিন্দা  আব্দুল হান্নান বলেন, “গতকাল সোমবার ভোরবেলায় আমি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ডায়রিয়ায় মহামারীর লক্ষণ দেখা দিয়েছে বলে মনে হয়।” 

হাসপাতালে সিটের খুব স্বল্পতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ডাক্তাররা পরিস্থিতি ঠিকমতো সামাল দিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে শেরপুরে ডায়রিয়া পরিস্থিতি খুব খারাপ পর্যায়ে রয়েছে।”

শেরপুর পৌরসভার গৌরিপুর মহল্লার বাসিন্দা ডায়রিয়া রোগী সানোয়ারা বেগম বলেন, “আমি সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসা চলছে। পাতলা পায়খানা কমে নাই। চিড়া আর স্যলাইনের পানি খাইতাছি; আর স্যলাইন চলতাছে।” 

শ্রীবরদী উপজেলার বটতলা এলাকার সানজিদ হাসান সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান। 

শেরপুর শহরের বাসিন্দা জীবন দেবনাথ বলেন, “আমার স্ত্রীকে  সোমবার সকালে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছি।  আসার পরে অনেক স্যালাইন ও ওষুধ লাগছে। হাসপাতাল থেকে কিছু দিছে, আর আমার বাইরে থেকে কিছু কিনতে হয়েছে।”  

শহরের নাহপাড়ার ফিরোজ তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন জানিয়ে বলেন, মঙ্গলবার একটু ভালো আছেন। ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যাবেন।

ময়মনসিহের বাস চালক হারুন সোমবার বিকালে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। 

তিনি বলেন, “ডায়রিয়া রোগীর চাপে হাসপাতালে স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। স্যালাইন ওষুধ যা কিছু নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের একটা স্যালইনও আমি পাইছি না।” 

জেলা সদর হাসপাতালে স্টাফ নার্স আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, “সোমবার হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৯১ জন। মঙ্গলবার সকালে ভর্তি হয়েছে আরও ১৪ জন। ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।” 

এই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. খায়রুল ইসলাম সুমন বলেন, প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে ৮০ থেকে ৮৫ জন ডায়রিয়া ভর্তি হচ্ছে। সোমবার হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৯০ জনের মতো।  

“আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। এ সময়ে কেন ডায়রিয়া হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে ডায়রিয়া হচ্ছে।”  

যারা রোগীর কাছে থাকবেন তাদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর খাওয়া-দাওয়া করা এবং খাওয়া ও হাত ধোয়ার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।