প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। যেখানে এই ওয়ার্ডে আসন সংখ্যা ১২টি জানান সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স।
Published : 23 Apr 2024, 09:05 PM
দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন।
মঙ্গলবার টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও টাঙ্গাইল সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মৌসুমি রোগে আক্রান্তদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সিট না পেয়ে বারান্দায় শুয়ে আছেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগী; শিশু ওয়ার্ডেও একই চিত্র।
টাঙ্গাইল সদর হাসপাতাল সিনিয়র নার্স রাশিদা আক্তার জানান, মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত মেডিসিন বিভাগের ভর্তি হয়েছে ১২০ জন রোগী। আর ২৪ ঘণ্টায় পুরুষ, মহিলা ও শিশু মিলে এ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ২৫০ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়েছেন।
তিনি বলেন, “গত পাঁচ দিনে হাসপাতালে মোট ১২৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাস কষ্ট ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীই বেশি।”
মেডিসিন মহিলা ওয়ার্ডে প্রায় রোগীই তীব্র গরমের কারণে বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাদের স্যালাইনের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এই নার্স।
সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের এক ব্যক্তি তীব্র গরমের মধ্যে অজ্ঞান পড়ালে তাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে স্যালাইন দিতে দেখা গেল।
ওই রোগীর স্বজন হাছিনা বেগম বলেন, “তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে অজ্ঞান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।”
টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার আসমা আক্তার জানান, তার আত্মীয় সুমি আক্তার সুস্থই ছিলেন। কয়েকদিনের তীব্র গরমের কারণে তার বুকে এক ধরনের ব্যথা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং রোগীকে ভর্তি করান।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে মৌসুমি ফ্লু জনিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। ঠান্ডা পানি পান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের প্রবণতাও যায় বেড়ে। এ সময় পানিবাহিত রোগ বেড়ে যায়। দূষিত খাবার ও পানি দিয়ে এই সংক্রমণ ছড়ায়।
সদর হাসপাতালের শিশু ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সিনিয়র নার্স আফরোজা আক্তার বলছিলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। যেখানে এই ওয়ার্ডে আসন সংখ্যা ১২টি।
শরীর দুর্বল হওয়ায় শিশুদের স্যালাইনের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি সদর উপজেলার বেড়াডোমা এলাকার সোমা বলেন, তীব্র গরমে মেয়ের ডায়রিয়া শুরু হয়। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (শিশু বিশেষজ্ঞ) মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রচণ্ড গরমে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, হাঁপানি, সর্দি, জ্বর-কাশি বেশি হচ্ছে, যেটা ভাইরাল ফ্লু। এ ছাড়াও টাইফয়েড ও পানিবাহিত হেপাটাইটিস এবং জন্ডিসের প্রবণতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, “তাপপ্রবাহের কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়ে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে হিটস্ট্রোকের মতো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেড়েছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গরমের তীব্রতায় বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। “
গরম থেকে বাঁচতে শিশুকে বেশি করে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন এই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুজাউদ্দিন তালুকদার বলেন, তীব্র তাপে গরমজনিত রোগ বাড়ছে। জ্বর, ঠান্ডা ,কাশি, ডায়াবেটিক বৃদ্ধি ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে।
“গরমে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করাটা জরুরি।”
গরমজনিত জ্বরে প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে টানা তিনদিন প্যারাসিটামল খাওয়ার পর, জ্বর না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন তিনি।
এ ছাড়া ঢিলেঢালা কাপড় পড়া, বাইরে গেলে ছাতা, টুপি, ক্যাপ ব্যবহার করাসহ বিশুদ্ধ পানির বোতল রাখার কথাও বলেন এই চিকিৎসক।