৮ অগাস্ট আর জি কর হাসপাতালে ৩২ বছর বয়সী এক নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
Published : 16 Aug 2024, 11:51 PM
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এই কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়। ‘জাস্টিস ফর মৌমিতা’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘নো মোর রেপিস্টস’- বলে স্লোগান দিতেও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি কবিতা ও গান পরিবেশন করে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, “বাংলাদেশ হতে ভারত, ভারত হতে সমতলে-পাহাড়ে যেখানেই ধর্ষণ হোক, অন্যায় হোক, বৈষম্য হোক আমরা দাঁড়াবো। প্রতিবাদ করবো। প্রতিটি ধর্ষণই রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, রাষ্ট্র ধর্ষককে তৈরি ও পৃষ্ঠপোষকতা করে। আমাদের নারীরা রাজপথে, লড়াইয়ে, সংগ্রামে সব থেকে বেশি নিরাপদ। সবাইকে বলবো ঐক্যবদ্ধ হয়ে, যেখানেই কোনো অন্যায় হোক, ধর্ষণ হোক আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
“২০১১-২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় চার হাজারের মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে; যেখানে মামলার নিষ্পত্তি বা বিচার হয়েছে মাত্র পাঁচটি। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার আইন পরিবর্তন করে সেসব ধর্ষণের ঘটনার বিচার করবে। আমরা চাই, আমাদের নারীরা স্বাধীনভাবে নিরাপদে বসবাস করুক।”
আরেক সমন্বয়ক সানজিদা ঢালী বলেন, “একজন ডাক্তার সব সময় তার কর্মস্থলকে দ্বিতীয় বাড়ি মনে করেন। আর সেখানেই তিনি নির্মমভাবে ধর্ষণ ও হত্যার স্বীকার হলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে সেটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তার কারণ, তারা খুনিদের ধরতে চায় না। আমরা বাংলাদেশ থেকে বলতে চাই, এ ধরনের অন্যায় আমরা মেনে নেব না।
“আমাদের দেশে ছাত্রদের যখন শেখ হাসিনার সরকার নির্মমভাবে হত্যা করছিলো; তখন ভারতের ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। এখন আমাদের সময় এসেছে, আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। তাদের দেশে তারা যেমন নির্যাতিত, আমাদের দেশেও এমন অনেকে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। তারা যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে আর কখনো কেউ এমন কাজ করার সাহস পাবে না।”
এ সময় ভারতের জনগণের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “একজন ডাক্তার যিনি মানুষের সেবা করার পর ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় একটু ঘুমাতে গেছেন; ঠিক সেই মুহূর্তে তার ওপর কিছু পশু বর্বর পাশবিকতা চালিয়েছে। তাকে ধর্ষণ করার পর খুন করেছে। এটি মানব সমাজের জন্য চরম অপমানের।
“ভারতসহ বাংলাদেশে বিগত সময়ে যেসব ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে; আমরা তার সুষ্ঠু বিচার চাই এই আলোকিত সন্ধ্যা থেকে।”
কর্মসূচিতে সমাপনী বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
৮ অগাস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ৩২ বছর বয়সী এক নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্যাতিতার চোখ, মুখ ও গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এ ছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে।
ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ সঞ্জয় রায় নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি পেশায় একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার। তিনি কলকাতা পুলিশের অধীনেই কাজ করেন। পাশাপাশি আর জি কর হাসপাতালে রোগী ভর্তি এবং তাদের দেখাশোনার কাজও করতেন তিনি।
ঘটনার দিন গভীর রাতে সঞ্জয়কে দেখা গিয়েছিল হাসপাতালে চারতলার সেমিনার হলের আশপাশে। এই সেমিনার হল থেকেই নারী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে ভারতজুড়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া ভারতজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।