আট বছর পর নাফ নদীতে জেলেদের নামার অনুমতি দেওয়া হলেও তাতে কয়েকটি শর্তও দেওয়া হয়েছে।
Published : 14 Feb 2025, 12:17 AM
দীর্ঘ আট বছর পর নাফ নদীতে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে প্রশাসন। এতে জেলেরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের নির্দেশনায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে জেলেরা মাছ ধরা শুরু করতে পারবেন।
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলে, “সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নাফ নদীতে জেলেদের মাছ শিকার করতে খুলে দেওয়া হয়েছে। আপাততে তিন মাসের জন্য নাফ নদীতে মাছ ধরতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডসহ সংশ্লিষ্টদেরও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, হাই কোর্ট টেকনাফের নাফ নদীতে জেলেদের বৈধভাবে মাছ ধরা কার্যক্রম চালুর জন্য জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়।
মাদকের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ ছিল।
পাঁচ শর্তে অনুমতি
আট বছর পর নাফ নদীতে জেলেদের নামার অনুমতি দেওয়া হলেও তাতে কয়েকটি শর্তও দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে- ১. সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমানায় অভ্যন্তরে নাফ নদীতে শাহপরীর দ্বীপ হতে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত মাছ ধরতে পারবে।
২. জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবির পাঁচটি নির্ধারিত পোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাবে এবং মাছ ধরা শেষে ফেরত আসার পর বিজিবির পোস্টে তল্লাশি করার ব্যাপারে বিজিবি সদস্যকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। কোনো জেলে চেকপোস্টে না জানিয়ে মাছ ধরতে পারবে না।
৩. কোনোক্রমে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না।
৪. মৎস্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদান করা যেতে পারে। যাতে কোনোক্রমে নিবন্ধিত জেলে ব্যতীত কেউ নাফ নদীতে মাছ ধরতে না পারে।
এবং ৫. এই অনুমোদন সাময়িক। তিন মাস পর সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ অনুমতি নবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
জেলেদের ‘ঈদ আনন্দ’
এদিকে দীর্ঘ আট বছর পর নাফ নদী খুলে দেওয়ায় খুশির জোয়ার বইছে টেকনাফের জেলেদের মাঝে।
এ বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপ মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল গনি বলেন, “২০ বছর ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার করে আসছিলাম। কিন্তু ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামায়, সেসময় রোহিঙ্গা অবুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি মাদক ঠেকাতে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আমরা জেলেরা খুব কষ্টের জীবন পার করতে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে নাফ নদী খুলে দেওয়ায় আমাদের জেলে পরিবারের মাঝে ঈদের আমেজ চলে আসছে। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং মাদক চোরাচালান ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে যেন জেলেরা জড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ অবস্থান আমাদের থাকবে।”
উপজেলা নাফ নদী জেলে সমাজ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আমান উল্লাহ বলেন, “জেলেদের মাঝে আজ আনন্দের জোয়ার বইছে। নির্দেশনানুযায়ী সব নিয়ম অনুসরণ করে জেলেরা মাছ শিকারে যাবে। কেউ যাতে আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় সেদিকে নজর দেওয়া হবে।”
জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে জেলেরা দুঃখ-কষ্টে তাদের জীবন-যাপন করেছেন। তাদের মাঝে আজ স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।”
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিডং ও রাসেডং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি মাদক বন্ধে নাফ নদীতে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ রেখেছিল সরকার।