কলাগাছের বাকলের সুতায় তৈরি প্রথম শাড়ি ‘কলাবতী’

শাড়িটির দাম এখনই সঠিক বলা যাচ্ছে না, তবে প্রাথমিকভাবে সাত থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2023, 05:55 AM
Updated : 2 April 2023, 05:55 AM

কলাগাছের বাকল ব্যবহার করে এতদিন বাহারি হস্তশিল্প তৈরি হচ্ছিল দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তবে এবার প্রথমবারের মত কলাগাছ থেকে পাওয়া সুতা দিয়ে বান্দরবানে বানানো হয়েছে শাড়ি। জামদানির মতো চমৎকার নকশার এই শাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কলাবতী’।

লম্বায় সাড়ে তের হাত এবং আড়াই হাত প্রস্থের শাড়িটি বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তৈরি করেছেন মণিপুরি তাঁত শিল্পী রাঁধাবতী দেবী।

কলাগাছের সুতা (তন্তু) থেকে তৈরি করা বিভিন্ন হস্তশিল্পের পাইলট প্রকল্প ধরে এই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন বলেন, “বান্দরবানে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই এখানকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। সেই চিন্তা থেকেই কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি করা হয়।

“বান্দরবান জেলায় অসংখ্য কলাগাছ রয়েছে। ফল সংগ্রহের পর গাছটি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। সেই ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকেই সুতা তৈরি করা হয়। সেই সুতা থেকে পর্দার কাপড়, পাপোজ, ব্যাগ, কলমদানী ও বিভিন্ন হস্তশিল্প তেরি করার পর পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শাড়ি তৈরির। ”

তবে কলাগাছের বাকল (তন্তু) থেকে শাড়ি তৈরি করা এত সহজ ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “এক বছর আগে থেকেই কলাগাছের বাকল থেকে সুতা তৈরি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু দক্ষ তাঁতশিল্পীর অভাবে শাড়ি তৈরি করা যাচ্ছিল না।

“পরে মৌলভীবাজার থেকে তাঁত শিল্পী রাঁধাবতী দেবীকে বান্দরবানে নিয়ে আসার পর তিনি মত দিলেন এই সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করা সম্ভব।”

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি আরও বলেন, “প্রথমে একটি ছোট কাপড় তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি সফল হলেন। তখন চিন্তা করা গেল যেহেতু কাপড় তৈরি করা গেছে তাহলে শাড়িও তৈরি করাও সম্ভব। তারপর সুতা প্রস্তুত করে বুনন পর্যন্ত দশ দিনে একটি পূর্ণাঙ্গ শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

তাঁত শিল্পী রাঁধাবতী দেবী জানান, তিনি সিলেটে সমবায় অফিসে হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করতেন। অবসরে যাওয়ার পরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কল্পনাও করেননি যে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করা যায়।

তার এলাকায় যারা মনিপুরী শাড়ি বুনেন তারা তাকে বলেছিলেন এ দায়িত্ব না নিতে। তাদের আশঙ্কা ছিল তিনি ব্যর্থ হবেন। জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারলে মনিপুরী তাঁত শিল্পীরা ছোট হবেন। তবে তিনি এ চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন।

তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির সাহস ও অনুপ্রেরণায় দশ দিনের মধ্যে কলাগাছের বাকল থেকে তৈরি সুতা দিয়ে শাড়ি বানাতে সক্ষম হয়েছি। শাড়িটি তৈরি করতে পেরে আমি খুব খুশী।”

“কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করার জন্য মেধা, শ্রম, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সর্বোচ্চ উজাড় করে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে জেলা প্রশাসকের চিন্তা ও পরিকল্পনাকে সফল করা গেছে।”

জেলা প্রশাসক জানান, প্রথমবার নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হওয়ায়  শাড়িটির দাম এখনই ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে সাত থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করা হলে তাঁতীরা লাভবান হবেন।

শাড়িটি বর্তমানে বান্দরবানের ব্র্যান্ডিং ‘অপরূপা বান্দরবান’ আওতায় থাকবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “কেউ যদি আর দাবি না করে তা হলে প্রথমবারের মত কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি বান্দরবানেরই ব্র্যান্ডিং হবে।”

তবে কলাগাছের সুতাটি এখনো ততটা মসৃণ নয় জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, স্থানীয়ভাবে যতটুকু সম্ভব সুতা মসৃণ ও নরম করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই সুতা কিভাবে আরও মসৃণ ও নরম করা যায় তার জন্য গবেষণা করা দরকার।

এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান জেলা ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।