শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও চালবন সড়কের তিন মাথার মোড়ে নান্দনিক ভাস্কর্যটি গুড়িয়ে দেয় কিছু মানুষ।
Published : 10 Feb 2025, 01:25 AM
সুনামগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুরে কৃষান চত্বরের ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন দায়িত্বশীলরা।
শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও চালবন সড়কের তিন মাথার মোড়ে নান্দনিক ভাস্কর্যটি গুড়িয়ে দেয় কিছু মানুষ।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকেও ভাস্কর্য গুড়িয়ে দিতে পোস্ট করে কয়েকজন। পরে সংঘবদ্ধ হয়ে তারা ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে। সে দৃশ্য তারা ফেইসবুকে লাইভও করেন।
এ ঘটনার পর সারাদেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
রোববার সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যারা কৃষান চত্বর ভেঙেছে তাদেরকে ‘বেকুব’ আখ্যায়িত করে বলেন, “যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
দুই বছর আগে হাওরের সংগ্রামী ও সাহসী কৃষকের মাথা না নোয়ানো রূপ তুলে ধরা এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। সুনামগঞ্জের অন্যতম একটি পর্যটন ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়া ভাস্কর্যটি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিদ উর রহিম জাদিদের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, শিমুলবাগান, যাদুকাটা নদী, নিলাদ্রীসহ পর্যটন স্পটগুলো দেখতে যেতে হলে প্রথমেই এই সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করত। কৃষান চত্বর দেখে পর্যটকরা ছবি তুলে ও মুগ্ধতার কথা লিখে সংশ্লিষ্টদের প্রশংসা করতেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বালু-পাথর ব্যবসায়ী বলেন, “এই ভাস্কর্যসহ এই সড়কের আরও একাধিক বৃক্ষ ও প্রাণীর ভাস্কর্য পর্যটকদের কাছে যেভাবে প্রশংসিত হয়েছে সেভাবে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যও ফুটে উঠেছে। এখন এগুলোও হুমকির মুখে পড়েছে।”
তিনি বলেন, “শুক্রবার রাতে একদল লোক এসে যখন হাতুড়ি শাবল দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙছিল তখন আমাদের খারাপ লাগছিল। আমরা প্রথমে বাধা দেওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু তাদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে আমরা ভয় পেয়ে যাই। তারা ঘণ্টা খানেকেরও বেশি সময় উৎসব নিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে।”
রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও উত্থাপিত হয়েছে ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়টি।
পরে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন দুঃখপ্রকাশ করে এসব বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “এভাবে অরাজনৈতিক ভাস্কর্য ভাঙচুর করলে আতঙ্ক তৈরি হয়। মানুষ বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে নেয়। তাই এ বিষয়ে সবার সচেতন থাকা উচিত। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, “শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা রাজনৈতিক ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে এটি না করে সভায় বলা হয়েছে।
“তবে কৃষান চত্বর ভাস্কর্যটি ভাঙার বিষয়ে সভায় দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে। এ ধরনের অরাজনৈতিক ভাস্কর্য যাতে কেউ না ভাঙে সেজন্য কঠোরভাবে বলা হয়েছে।”