“যারা কমপ্লেক্সের ভেতরে আছে তারা দেশে যাতে অরাজগতা সৃষ্টি হয়, সেই পাঁয়তারা করছে।”
Published : 04 Dec 2024, 10:02 PM
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি থাকায় সেগুলো ভাঙচুর করেছে যুবদলের নেতাকর্মীরা।
বুধবার দুপুরে বন্দর থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন কবিরের নেতৃত্বে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই সময় কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা মুক্তিযোদ্ধারের সঙ্গে ‘হাসিনার ছবি থাকে কী করে’ বলে উচ্চবাচ্যও করেছেন তারা।
বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমাণ্ডার কাজী নাছিরউদ্দিন বলেন, “যুবদলের নেতা-কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়াও কিছু ঐতিহাসিক ছবি দেওয়ালে ছিল, সেগুলোও নামিয়ে ভাঙচুর করে।
“আগেই দেওয়াল থেকে নামিয়ে রাখা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিগুলোও ভেঙে বাইরে ফেলে দেয়। ভেতরে কিছু প্ল্যাস্টিকের চেয়ারও ভাঙচুর চালায় তারা। কমপ্লেক্সে থাকা বইগুলোও ছুড়ে ফেলে দেয়।”
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমানের কার্যালয়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক দফায় ভাঙচুর ও লুটপাট এবং লুট করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও’র সামনে সেসব বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন বলে জানান নাছিরউদ্দিন।
তার অভিযোগ, “সভা শেষে ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান ও বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন করেন। তারা থাকা অবস্থায়ই যুবদলের নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হয়। ইউএনও এবং ওসি চলে যাবার পরপরই ভাঙচুর শুরু হয়।”
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন বলেন, ইউএনও এবং ওসির ‘উপস্থিতিতে’ কমপ্লেক্স ভবনের ভেতর ঢুকে পড়ে হামলাকারীরা। পরিস্থিতি ‘উত্তপ্ত দেখে’ সরকারি কর্মকর্তারা সেখান থেকে বেরিয়ে গেলে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় কমপ্লেক্সের ভেতরে শেখ মুজিবুর রহমানের কংক্রিটের প্রতিকৃতিও ‘হাতুড়ি দিয়ে’ ভেঙে ফেলা হয়।
এদিকে বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাঙচুরের ঘটনার একটি ভিডিও সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। সেখানে যুবদল নেতা হুমায়ূন কবির তার অনুসারী কর্মীদের শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করতে দেখা গেছে। ভবনের ভেতরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে ক্ষিপ্ত হয়ে টেবিল চাপড়ে কথা বলছিলেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ সময় যুবদল নেতা হুমায়ূন কবিরকে মুক্তিযোদ্ধা নাছিরউদ্দিনকে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে নির্দেশ দিতেও দেখা গেছে।
পরে হুমায়ূন কবির সাংবাদিকদের বলেন, “দুপুরে ইউএনও এবং ওসিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে প্রবেশ করতে দেখি। পরে আমরা ওসি সাহেবের সাথে কথা বলি, তিনি চলে যান। আমরা গোপন সূত্রে খবর পাই, এখানে মিটিং হচ্ছে। ওই সময় আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ঢুকতে চাইলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়।
“পরে আমরা জোর করে ঢুকে দেখি, দেয়ালে অসংখ্য হাসিনার ছবি, বঙ্গবন্ধুর ছবি। তাদের প্রশ্ন করলাম, দেশ স্বাধান হয়েছে পাঁচ মাস তাহলে এখনও এখানে এসব ছবি থাকে কী করে? পরে আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়ে ছবিগুলো নিচে নামিয়ে ভাঙচুর করে রাখছি।”
তিনি বলেন, “যারা কমপ্লেক্সের ভেতরে আছে তারা আওয়ামী লীগের দালাল, হাসিনার দালাল…। দেশে যাতে অরাজকতা সৃষ্টি হয়, দেশটা যাতে ধ্বংসের পথে যায়, তারা এটা পাঁয়তারা করছে। এখন আমরা যারা বিএনপির নেতারা আছি, তারা সাংবাদিক ভাইদের নিয়ে একটা ব্যবস্থা করব।”
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা নাছিরউদ্দিনের ভাষ্য, “শেখ হাসিনার ছবি আগেই নামিয়ে আমরা গোডাউনে রেখেছিলাম। তারা সেখান থেকে বের করে ভাঙচুর করেছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানোর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই নামানো হয়নি।”
ভাঙচুরের বিষয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কমপ্লেক্সের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়েছে, ব্যাপারটি এমন না। আসলে ভাঙচুর করার মতো তেমন কিছুই নেই।
“৫ আগস্ট সেখানে একবার হামলা হয়েছিল। কিছু ছবি ছিল, আজ ওই ছবিগুলো বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিকৃতিটিও আগে ভাঙা হয়েছিল। আজ তার উপরেই কয়েকটা বাড়ি দিয়েছে বলে শুনেছি।”
বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, “কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ছবিগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এই বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ না করলেও কমপ্লেক্সের চাবিটি পুলিশের কাছে রয়েছে। পরে দায়িত্বরতদের কাছে দেওয়া হবে।”